Office Desk
09th Jun 2024 7:08 am | অনলাইন সংস্করণ
হামিদুল আলম সখা
৬ জুন ২০২৪ তারিখ জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী জনাব আবুল হাসান মাহমুদ আলী ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন।
সরকারের বাজেট নির্ধারণ করা হয় সারা বছরের ব্যয় কত হবে সেটা হিসাব করে। কিন্তু একটি সংসারের বাজেট সংসারের কর্তাব্যক্তি নির্ধারণ করে তার মাসিক বা বাৎসরিক আয়ের উপর।
বিশ্ববাজারে অর্থনৈতিক বাজার ব্যবস্থা বেশ কয়েক বছর যাবৎ অসহিষ্ণু। বাণিজ্য ভারসাম্য টালমাটাল অবস্থা।উন্নত , অনুন্নত সব দেশের অর্থনীতি খারাপ অবস্থা চলছে।এই অর্থনীতির বিরূপ অবস্থা রাশিয়া-ইউক্রেন, ইসরাইল – ফিলিস্তিনের যুদ্ধের কারণে। বিশেষ করে বিশ্ব বাজারে ডলারের দাম উর্ধ্বগতির কারণে সকল দেশের অর্থনীতি বেসামাল হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ বেশ কয়েক বছর যাবৎ অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করে এগিয়ে চলছে। এমনিতেই বাংলাদেশের অর্থনীতি রপ্তানির চেয়ে আমদানি নির্ভর। আমদানি নির্ভর হওয়ার কারণে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ ডলার রিজার্ভ থেকে খরচ করতে হয়।ফলে প্রতি কোয়ার্টার এ বাংলাদেশের রিজার্ভ নিম্নমুখী হয়ে থাকে।যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান বলেছেন, রিজার্ভ খরচ হলেও পূণর্ভরণ হয়ে যায় রেমিট্যান্স আরোহনের মাধ্যমে। বাংলাদেশের মানব সম্পদ একটি বিরাট মাধ্যম।এটি অনস্বীকার্য যে, আমাদের মানব সম্পদ আমাদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে রেখেছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী একবারের বাজেট উপস্থাপন করেছেন ৭লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা।আয় খাত থেকে আসবে ৫লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা।ঘাটতি থাকবে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা।
বিশিষ্ট অর্থনৈতিক বিশ্লেষক সৈয়দ নাসিম মন্জুর অভিমত ব্যক্ত করেছেন এভাবে – ঘোষিত বাজেটে ৪টি খাত অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার মনে করেন এই চারটি খাত পরিপালন করা গেলে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। খাতগুলো হলো – স্বাস্থ্য খাত উন্নত করা, বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের পরিবেশ উন্নত করা এবং দূর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা।
২.
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন ১৩ জন। জনাব তাজউদ্দীন আহমদ থেকে শুরু আহম মোস্তফা কামাল পর্যন্ত।এর মাঝে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৭৬-১৯৭৯ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে নয়া অর্থমন্ত্রী জনাব আবুল হাসান মাহমুদ আলী বাজেট প্রস্তাব কালে দৃঢ়তার সাথে বলেন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ তার অন্যতম প্রধান কাজ।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এই বাজেট নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেন।এই বাজেটে “কালো টাকা সাদা” করার বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। অর্থাৎ ঘরের ভিতর লুকিয়ে রাখা টাকা বাইরে আনার একটি পদক্ষেপ।তিনি ২০২৪ সালে বর্তমান সরকার (বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ) নির্বাচনী ইশতেহার এ দৃঢ়তার সাথে বলেছেন , “দূর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ ” ইস্তেহারে বলা হয়েছে, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন,ঘুষ,ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি ও পেশীশক্তির দৌরাত্ম ও দূর্বৃত্তায়ন নির্মূলে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ চলমান থাকবে।
রাষ্ট্রীয় উচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের অবৈধ সম্পদ অর্জনের যেসব কাহিনী সংবাদ পত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের ওয়াকেবহাল হলো তাদের মনে এখন প্রশ্ন তাহলে তাদের অবৈধ সম্পদ বৈধ করার জন্য ১৫ শতাংশ কর দিলেই হবে।
এতে অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের উৎসাহিত করা হয়।ফলে যে সুশাসন বাংলাদেশের জন্য দরকার সেটা হচ্ছে না।
সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,একটি বাজেটের মূল বিষয় হলো সম্পদ আহরণ,ব্যয় ও উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন। কিন্তু রাজস্ব আহরণ কম হওয়ায় সরকারের ঋণ বাড়ে।
বর্তমানে প্রশ্ন উঠছে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ১লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা।যদি আর্থিক খাতের অবস্থা এমনটি হয় তবে সরকার বাজেটের ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে ব্যাংক থেকে কিভাবে ঋণ নিবে?
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বাজেট উপস্থাপন করার সময় তার বক্তব্যে বলেন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পশ্চিমা বিশ্ব ২০২২ সাল থেকে ধাপে ধাপে সুদের হার বাড়িয়েছে। আমাদের দেশেও বাড়াতে হয়েছে। পাশাপাশি মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।
তারপরও তিনি বলেন,চলতি বছরের শেষে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।
তবে অন্য দিকে ৫৪১,০০০ কোটি টাকা বাজেটের আয় আহরণের জন্য করের উপর নির্ভরশীল হতে হবে। এক্ষেত্রে রাজস্ব আয় এ বাজেটের মূখ্য ভূমিকা পালন করবে।
বর্তমান সরকার এর নয়া অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী কর্তৃক পেশকৃত বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে অগ্রাধিকার অবশ্যই দিতে হবে। আমাদের বিশ্বাস এবারের বাজেট দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে যুগোপযোগী প্রতিফলন ঘটিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভূমিকা রাখবে ।
লেখক : হামিদুল আলম সখা
সাধারণ সম্পাদক, সহযোদ্ধা একাত্তর।
সাধারণ সম্পাদক, ব্যাংকার্স ওয়েলফেয়ার ক্লাব বাংলাদেশ।
আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।
ই মেইল: [email protected]
Array