• আজকের পত্রিকা
  • ই-পেপার
  • আর্কাইভ
  • কনভার্টার
  • অ্যাপস
  • সেই ছেলেটি 

     Masum52 
    04th Apr 2024 4:13 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    সেই ছেলেটি

    ————-হামিদুল আলম সখা
    রাতুল সিগারেটে আগুন ধরিয়ে একরাশ ধূয়া ছেড়ে দিল।ধূয়া বাতাসে একসময় মিলিয়ে গেলো।কিরে মতিন পাত্তি মাইরা একটা চা দে। মূহুর্তে চা এসে গেলো। রাতুল চায়ে চুমুক দিয়েছে মাত্র লালু এসে বললো ওস্তাদ কাম আছে।লালু সবসময় একটা না একটা কাজ নিয়ে আসে।ফয়দা তো থাকেই।কানে কানে রাতুল কে বললো লালু।ঠিক আছে যাওন যাইবো।সমস্যা নাই কা।চা খাবি নি?
    লালু উত্তর দেয় হ ওস্তাদ খামু।
    ল সিগারেট খা। রাতুল লালু কে সিগারেট এর প্যাকেট এগিয়ে দেয়।
    মতিন এর চায়ের দোকান সব সময় জমজমাট।সকাল সাতটায় দোকান খোলে।বন্ধ করে রাত দশটায়।রাতুলের এখন অনেক পয়সা।বাড়ী করেছে।থাকার জায়গার অভাব নেই।সবাই এখন তাকে বিপদে পড়লে ডাকে। রাতুল এলাকার সবার পাশে থাকে।বিশ বছর আগের কথা মনে পড়ে যায়।
    পাঁচ ছয় বছরের একটি ছেলে মতিনদের চা স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল।দেখে মনে হচ্ছিল কতদিন খায়নি। মতিনের বাবা সুরুজ মিয়ার ব্যস্ততা কমলে ছেলেটিকে ডাকে।
    – তোর নাম কি? বাড়ি কই?
    – কিরে ,তুই বোবা নাকি?
    না চাচা,আমার খুব খিদা লাগছে।
    আরে সেইটা কবি তো?
    সুরুজ মিয়া ছেলেটিকে ভিতরে এনে রুটি ডাল খাওয়ায়।তারপর থেকে ছেলেটি সুরুজ মিয়ার কাছে থাকে।চায়ের দোকানে বয়ের কাজ করে। রাতুল নাম সুরুজ মিয়া রাখে।ছেলেটি কিছু বলতে পারেনি। নিজের নাম,বাবা মার নাম, বাড়ির ঠিকানা কিছুই বলতে পারেনি। সুরুজ মিয়ার খুব মায়া হয়েছিল। রাতুল চাচাকে খুবই সমিহ করতো।রাতুলের বয়স যখন ১৩-১৪ বছর তখন সুরুজ মিয়া খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে।দৌড়ে গিয়েছিল ডাক্তার করিম এর বাড়িতে।রাত তখন নয়টা। ডাক্তার করিম আসেনি। সুরুজ কে দেখতে যায়নি।বাড়িতে এসে দেখে সুরুজ মিয়া নেই।মারা গেছে।মতিনের বয়স তখন দশ বছর।মতিনের জন্মের সময় মা মারা যায়। সুরুজ মতিনের দিকে তাকিয়ে আর বিয়ে করেননি। সুরুজ মিয়া সবাইকে বলতো আমার দুই পোলা রাতুল আর মতিন।
    রাতুলের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।যে বাবা সমতুল্য সুরুজ তাকে ডাক্তার দেখাতে পারলো না।করিম ডাক্তার আসলো না।মাথায় রক্ত চেপে গেলো।করিম ডাক্তার এর বাড়ি গিয়ে প্রচন্ড মারধর করলো। রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে এলো রাতুল। পরদিন পুলিশ এসে দোকান থেকে ধরে নিয়ে গেল থানায়।যাওয়ার আগে মতিনকে বললো তুই দোকান দেখাশোনা করিস।এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়লো রাতুল ডাক্তার করিমকে মেরেছে। দুইদিন পর রাতুল ছাড়া পেলো।
    পরদিন দোকান বসে চা খাচ্ছে রাতুল। এলাকার কয়েকজন এসে রাতুল কে বললো ,তুমি ঠিক করছো।ডাক্তার করিম একটা চামাড়।সেই থেকে রাতুল কে সবাই ভয় পায়।
    দুই।
    বিকেল বেলা লালু বাইকে রাতিনকে নিয়ে মুন্সী পাড়ায় গেলো।যে বাড়ির সামনে লালু দাঁড়ালো সেটা খায়ের চাচার বাড়ি।রাতিনকে সে খুবই স্নেহ করে।
    বিকেল বেলা লালু বাইকে রাতিনকে নিয়ে মুন্সী পাড়ায় গেলো।যে বাড়ির সামনে লালু দাঁড়ালো সেটা খায়ের চাচার বাড়ি।রাতিনকে সে খুবই স্নেহ করে।কিরে লালু এইডা তো খায়ের চাচার বাড়ি।
    – ঠিকই কইছেন।
    – তয় এখানে কেন আনছস আমারে।
    – চাচার মুখ থ্যাইক্যা শুনেন।
    ও চাচা,ও চাচা রাতিনরে লইয়া আইছি।
    বাড়ির ভিতর থেকে সাদা লুঙ্গি ও সাদা পাঞ্জাবি পড়া অবস্থায় বেরিয়ে এলো খায়ের চাচা। সূর্য অস্তমিত যাবে বলে।এটার নাম কবি সাহিত্যিকরা গোধূলি বেলা বলে থাকে। বৈঠকখানায় একটি টেবিল ও চারটি চেয়ার সর্বদা থাকে।এটা খায়ের চাচার বাবার আমল থেকেই। আভিজাত্য বলে কথা।
    – কিরে বাবা রাতিন। আজকাল তো তোমার দেখা পাওয়া যায় না।কই থাকো?
    – জি চাচা।একটু ব্যস্ত। খুবই সমীহ করে কথা বলে।
    লালু তোমারে কিছু কইছে?
    -না চাচা।ও কিছু কয় নাই।জিগাইলে কয় চাচার মুখ থাইক্যা শুইনো।
    বলেন চাচা।
    কি কমু কও! আজকাল পোলাপান মুরুব্বি মানে না।অনেকক্ষণ খায়ের চাচা চুপ থাকলো।একটু পর খায়ের চাচা ঠুকরে কেঁদে ওঠলো।রাতিন উঠে গিয়ে খায়ের চাচাকে জড়িয়ে ধরলো।
    – চাচা আপনি কাঁদবেন না ,আমারে কন কি হইছে।
    অনেক ক্ষণ পর খায়ের চাচা স্বাভাবিক হলো।তুমি তো জান আমার ছেলেটা ইটালি থাকে।আর মাইয়াডা ঢাকায় পড়াশোনা করে।আমি এই তল্লাটে সকলের সুবিধা অসুবিধা দেখি।আমার যতটুকু সাধ্য আছে।আলিমের পোলা আমার মেয়ের পিছে লাগছে। ছুটিতে আমার মেয়ে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে আসছে। একদিন সন্ধ্যাবেলায় ওর বান্ধবীর বাড়ি থেকে আসার পথে আমার মেয়ের পথ আটকায়।ওর হাতে ধরে টানাটানি করে।আমার মেয়ে রুবি আলীমের ছেলে বাচ্চুর গালে কষে একটা চড় মেরে চলে আসে।
    এরপর থেকে রুবিকে দেখলেই বলে চড়ের প্রতিশোধ নিমুই নিমু।আমি এখন কি করমু বলো বাবা রাতিন।
    রাতিন কিছুক্ষণ ভাবে। হঠাৎ চেয়ার থেকে উঠে দাড়ায়।চাচা আপনে কোন চিন্তা কইরেন না।আমি দেখতাছি বলেই রাতিন হন হন করে হেঁটে বাইকের কাছে আসে।লালু, ঐ লালু মটর সাইকেল ষ্টার্ট দে।লালু দৌড়ে এসে মটর সাইকেল ষ্টার্ট দিলো।বাইকটি শা শা করে চললো।
    তিন।
    মটর সাইকেল এসে দাঁড়ালো পুরানো একটি বাড়ির সামনে। পুরানো একতলা বাড়ি।ইট শুড়কি ,চুন দিয়ে তৈরি।বোনদের বাড়ি।এক সময় খুব প্রভাব প্রতিপত্তি ছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বোসরা পরিবারের সবাইকে নিয়ে চলে যায় কলকাতায়। পরিত্যাক্ত বাড়ি, জায়গা সম্পত্তি।সরকারের সম্পত্তি হয়ে গেছে।সচারাচর কেউ ঢুকে না সেখানে।গাছ গাছালির এ ছেয়ে গেছে পুরোটাই।
    বাচ্চু এখানে আস্তানা গেড়েছে।
    রাতদিন লালু কে বললো, যা দেখ বাচ্চু আছে কিনা?
    লালু পুরানো বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এলো বাচ্চুর সাথে আরো দুইজন।ফজল ও সাচ্চু।
    – কি ওস্তাদ আপনি এই সময় গরিবের আস্তানায়? আমার খুব ভালো লাগতাছে।ভিতরে আইবেন নি?
    -না। ভিতরে যাব না।তোর সাথে কথা আছে। এদিকে আয়।রাতিন বাচ্চুর হাতে ধরে টেনে কিছুটা দূরে গিয়ে দাড়ায়।বাচ্চু ভাবে কিছু তো হয়েছে।নইলে রাতিন ওস্তাদ আমার খোঁজে বোনদের পুরানো বাড়িতে ।মনে মনে ভাবে মেজাজ ঠান্ডা রাখতে হবে।
    ওস্তাদ কন ।
    – তুই একটা ফালতু পোলা আমি জানি।তোর বাপ তো ভালো মানুষ।এলাকার সব মুরুব্বিদের আমি সম্মান করি।এই জন্য সবাই আমাকে আদর করে। এলাকার মধ্যে এমন কিছু করা ঠিক না যেটা নিয়ে আমাদের দিকে আঙুল তুলে।তোর কোন কামে আমি বাগড়া দেই না।তুই আমার ছোট ভাই।আজ তোর নামে কঠিন নালিশ পাইছি।আমার তো লাম্বা খাড়াইয়া গেছে।করছস কি? খায়ের চাচার মাইয়্যা শহরে লেখাপড়া করে।তুই তারে অপমান করছস ?
    একদমে রাতিন কথাগুলো বলে।
    বাচ্চুর শরীর দিয়ে ঘাম ছুটে যাচ্ছে।চোখ লাল হয়ে গেছে।ভাবছে আজকে তো উত্তম মধ্যম হবেই।
    চার।
    ওস্তাদ আমি তো ঐ মাইয়ার লগে মশকরা করছি।একটু ভয় দেখাইছি।সত্য কইতাছি। বাচ্চু বিষয়টা হালকাভাবে নেয়ার জন্য কথাগুলো বলে।
    – বাচ্চু তুই এখন আমার সাথে  যাবি খায়ের চাচার বাড়ি।চাচার কাছে আর তার মেয়ের কাছে মাপ চাবি।
    – ওস্তাদ আমি তো তেমন কিছু করি নাই।
    – চুপ কর ।আমি যা কইছি , আমার সাথে এখন যাবি।চল।
    বাচ্চু রাজী হয়ে যায়।
    মোটর সাইকেলে তিনজন ওঠে।লালু স্টার্ট দেয়।অল্প সময়ের মধ্যে খায়ের চাচার বাড়ি পৌঁছে যায় ওরা। উঠানে ঢুকে  ডাক দেয় চাচা আমি রাতিন আইছি।
    খায়ের চাচা দরজা খোলে।আয় ভিতরে আয়। খায়ের চাচার ভাবতে পারেনি।এতো সহজে বাচ্চুকে ধরে নিয়ে আসবে।ওরা ভিতরে ঢুকলো।বাচ্চুকে কিছুই বলা লাগলো না। হঠাৎ করে খায়ের চাচার পা জড়িয়ে ধরলো।
    – চাচা, আমারে মাপ কইরা দেন। আমার ভুল হইয়া গেছে।
    – আরে ওঠো।তুমি আমার ছেলের মতো। তোমার বাপকে আমি কতভাবে সাহায্য করি তুমি তো জানো না।তুমি তো বাবা লেখাপড়া করলা না।এই তো সেদিন তোমার বাপ আমার কাছে আক্ষেপ করতে করতে চোখের পানি ফালাইলো।ছেলেডারে মানুষ করতে পারলাম না।লেখাপড়াও করলো না। তোমার বাবা তোমাকে নিয়ে অনেক চিন্তা করে।
    – হ চাচা।বাজান আমারে খালি বকাবকি করে। সবার ছেলে মেয়ে লেখাপড়া করে আর আমার ছেলে মস্তানি করে।
    খায়ের চাচার মেয়ে  বুবলিকে ডাকে। একটু পর বুবলি আসে ।
    বাচ্চু বুবলির কাছে গিয়ে বলে, বোন,আমারে মাপ কইরা দাও। আমার ভুল হইয়া গেছে।
    – ঠিক আছে।বাচ্চু ভাই আপনারে একটা কথা বলি , আপনি কোন মেয়ের সাথে এ রকম আচরণ করবেন না।
    – আচ্ছা বোন, আচ্ছা।
    এরপর রাতিন খায়ের চাচার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাচ্চুকে নিয়ে চলে আসে।
    পাঁচ।
    বাচ্চু মনে মনে খুব রাগ। খায়ের চাচার কাছে মাফ চাইতে হলো।সে কোন ব্যাপার না।ঐ মাইয়ার কাছে মাফ চাইতে গিয়ে মাথাটা
    খারাপ হয়ে গেছে।সহ্য করতে পারছে না বাচ্চু।
    বাপ নাই, মা নাই।কোন ঠিকানা নিই।এলাকায় আইস্যা বড় মাস্তান হইছে।রাতিন কে এক রাতে শেষ করতে মনস্থ করে বাচ্চু।
    মতিনের দোকানে রাতিন বসে।একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে থাকে। নিজের অস্তিত্বের কথা ভাবে।বাবা নাই, মা নাই।কেউ রাতিনের খোঁজ জানে না। মতিনের বাবা ঠাঁই দিয়েছিল বলে বেঁচে আছে। মতিনের বাবাকে বাপের মতোই দেখতো।আদর সোহাগ জীবনে পায়নি।সোহাগের বড়ই কাংগাল।
    রাতিন মতিনকে ডাকে। মতিন রাতিনকে ভাই বলে ডাকে।
    – জি ভাই।
    – আমার কাছে বয়। মতিন বসে।
    – ভাই কও ।দোকানে কাস্টমার আছে।
    – তোরে আমি বিয়া করামো।সুন্দর দেইখ্যা একটা বউ নিয়ে আসুম।
    – যা,যা।ক্যাশে যাইয়া বয়।
    মতিন কিছু বলে না।লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে দোকানে ঢুকে।
    আসসালাতু খায়রুন মিনানাউম। ফজরের আযান দিচ্ছে। মতিন কাঁথাটা গায়ে জড়ায়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে।টিনের চালে দুইটা কাক কা কা করছ। খুব বিরক্ত হচ্ছে মতিনের। দোকানের কর্মচারী কালু মিয়া মতিনকে ডাকে । মতিন ভাই উঠো।বেশ কয়েকবার ডাকার পর মতিন উঠে।
    – দোকানের চাবি নিয়া যা।
    – তুমি উঠো।কালু মিয়া তাড়া দেয়।
    চলো । মসজিদের কাছে চলো।
    – ক্যা, কি হইছে?
    – তুমি চলো, পা চালাও।
    মতিন দেখে মসজিদের কাছে অনেক মানুষের ভীড়।ভীড় ঠেলে মতিন এগিয়ে যায় ।বিশ্বাস করতে পারে না ।এটা ওর ভাই রাতিন। অনেকগুলো মাছি মুখের উপর ভনভন করছে।
    হ্যা।ভাই।আমার ভাই। চিৎকার করে ওঠে মতিন। আমার ভাইরে কেডা মারলো? মতিনের গগনবিদারী আওয়াজ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।সবার চোখে অশ্রু।খায়ের চাচা মতিনের কাঁধে হাত রাখে। মতিন খায়ের চাচাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।
    কেউ কেউ বলছে, আহারে! বাপ মা হারা সেই ছেলেটি আজ লাশ হয়ে গেলো।
    #
    লেখক: সম্পাদক, ত্রৈমাসিক মহুয়া,
    সাধারণ সম্পাদক, সহযোদ্ধা একাত্তর
    সাধারণ সম্পাদক, ব্যাংকার্স ওয়েলফেয়ার ক্লাব বাংলাদেশ।
    Array
    We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
    আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    April 2024
    M T W T F S S
    1234567
    891011121314
    15161718192021
    22232425262728
    2930