• ঢাকা, বাংলাদেশ

উজানের ঢলে তলিয়েছে সুনামগঞ্জের সড়ক 

 obak 
01st Jul 2023 2:54 am  |  অনলাইন সংস্করণ

নিউজ ডেস্ক: ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে দ্বিতীয়বারের মতো পাহাড়ি ঢল নেমেছে। কয়েক দিনের টানা বর্ষণ এবং উজানের এ ঢলে হাওড় এলাকার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এ জেলায় বন্যা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এদিকে প্রবল বেগে পানি প্রবাহে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে সুনামগঞ্জ ও তাহিরপুরে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আটকা পড়েছেন পর্যটক ও সাধারণ যাত্রীরা।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, তাহিরপুর উপজেলার সোলেমানপুর এলাকার পাটলাই নদীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ মিলিমিটার, ছাতকের সুরমা নদীতে ১৭ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি ২৪ মিলিমিটার, দিরাইয়ে সুরমা নদীর পানি তিন মিলিমিটার ও যাদুকাটা নদীর পানি শক্তিয়ারখলা পয়েন্টে ৪৪ মিলিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।  গত ২৪ ঘণ্টায় লাউড়েরগড় পয়েন্টে ১৪১ মিলিমিটার, ছাতকে ৩০ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জে ১৫০ মিলিমিটার দিরাইয়ে ২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বৃষ্টিপাতের ফলে যাদুকাটা, চলতি খাসিয়ামারা, চেলা, মনাই, সোমেশ্বরীসহ সব পাহাড়ি নদীর পানি বেড়েছে। তবে সুনামগঞ্জের ছাতকে সুরমা নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাকি সব নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।


মূলত গত দুদিনের বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বেড়েছে। দুই দিনের টানা বর্ষণ ও সীমান্তের ওপাড়ে মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় চলাচলের সড়ক ডুবিয়ে বিকট শব্দে হু হু করে ঢলের পানি ঢুকছে হাওড় ও লোকালয়ে। ঘোলাটে পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে হাওড় এলাকা।
শুক্রবার (৩০ জুন) ভোর থেকে মেঘালয় পাহাড়ের বিভিন্ন পাহাড়ি ছড়া দিয়ে ঢলের পানি সুনামগঞ্জের মধ্যনগর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, বিশ্বম্ভপুর উপজেলার সীমান্ত নদী দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে।

মধ্যনগর উপজেলার উত্তর বংশীকূন্ডা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূরু নবী তালুকদার জানান, শুক্রবার ভোর থেকে মেঘালয় পাহাড়ের মহেশখলা ছড়া দিয়ে প্রবল বেগে ঢলের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। ঢলের প্রবল স্রোতে সীমান্ত ঘেঁষা মহেশখলা বাঙ্গালভিটা ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের আট কিলোমিটার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এতে ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি, মহেশখলা, ঘোলগাঁও, রংপুর,বাঙ্গালভিটা, রূপনগর,রেঞ্জিপাড়া কলতাপাড়া গ্রামের লোকজনের চলাচলের একমাত্র সড়ক পানিতে  নিমজ্জিত হয়ে গেছে। এলাকার লোকজন পানি মাড়িয়ে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করছেন।
ঘোলগাঁও গ্রামের নিজাম উদ্দিন বলেন, শুক্রবার ভোর থেকে মহেশখলা ছড়া দিয়ে ঢলের পানি প্রবল বেগে প্রবেশ করছে। এতে গ্রামীণ সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রবল স্রোতে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, ঢল বন্ধ না হলে এসব এলাকার সড়ক পানিতে ডুবে থাকবে। তবে এখনও মানুষের ঘরবাড়িতে পানি ওঠেনি।

মধ্যনগর উপজেলার ১নং বংশীকূন্ডা উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূরুনবী বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা দুই দিনের ভারি বর্ষণে সোমেশ্বরী, উব্দাখালী নদী ও এর আশপাশের হাওড়ের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে রাস্তাঘাট ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। চলাচলে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন মানুষ। উপজেলার সদর, চামরদানী, বংশীকূন্ডা  দক্ষিণ ও বংশীকূন্ডা উত্তর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ও মধ্যনগর মহেশখলা সড়কের নিচু অংশ পানির স্রোতে তলিয়ে গেছে।

তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বলেন, আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে বাদাঘাট ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উজানের ঢলের প্রবল স্রোতে সড়কের বেলে মাটি সরে গেছে।

পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, তাহিরপুরের সীমান্ত এলাকায় ঢল নামার ফলে মাটির সড়কগুলো বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।  

স্থানীয়রা জানান, মধ্যনগর-মহিষখলায় বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। গত ২৪ ঘণ্টায় দেড় ফুটের মতো পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে হাওড়াঞ্চলে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুল হাওলাদার বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল তথা সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে কোনো কোনো নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে। এদিকে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে গেলে পানি দ্রুত নেমে যাবে।

এদিকে সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে রাস্তা পার হতে গিয়ে প্রবল স্রোতের পানিতে ভেসে যাওয়া নিখোঁজ শিশু নাঈমকে শুক্রবারও উদ্ধার করতে পারেনি ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। ঈদের দিন ২৯ জুন দুপুরে দিকে সড়ক পার হতে গিয়ে উপজেলার চামরদানী ইউনিয়নের বাংলাবাজার সংলগ্ন স্থানে প্রবল স্রোতের পানিতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হয় নাঈম (১১) নামে এক শিশু। শিশুটি বারহাট্টা উপজেলার অতীতপুর গ্রামের রেহান মিয়ার ছেলে। সে ঈদুল আজহার আগের দিন তার মায়ের সঙ্গে চামরদানী গ্রামে নানার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 

আর্কাইভ

October 2023
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031