ঢাকায় কেন এত তাপপ্রবাহ

নিউজ ডেস্ক: তীব্র গরমের জন্য কেবল বৈশ্বিক উষ্ণতার দোহাই দিলেই চলবে না। দায় নিতে হবে ঢাকাকেও। গত ২৮ বছরে প্রায় সাড়ে সাত ভাগ বনভূমি হারিয়েছে রাজধানী। তার ওপর আয়তনের তুলনায় আড়াইগুণ জনসংখ্যা ঢাকার তাপপ্রবাহের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। তারা বলছেন, কেবল গাছ লাগালেই হবে না; তা হতে হবে বিজ্ঞানভিত্তিক এবং করতে হবে পরিচর্যা। তাহলেই হয়তো দীর্ঘমেয়াদে সুফল মিলবে।

সম্প্রতি ঢাকার  তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে নামে সময় সংবাদ। সেখানে উঠে আসে নানা তথ্য।

কথায় আছে লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। কাঠাপ্রতি একটি করে গাছ বদলে দিতে পারে এ কংক্রিটের শহরের মানচিত্রের রংটা। কিন্তু একটি গাছের জন্য বরাদ্দ দুই হাত বাই দুই হাতের, সেই জমির আর্থিক মূল্য এই নগরে স্বর্ণের দামে। তাই লোভটা সামলে রাখা কঠিন, একটু লাভের আশায় সবুজের বদলে ইট কাঠের দেয়াল। পরিণামটা এখন সবারই জানা।
 
সুস্থভাবে বাঁচতে একটি নগরের ১৫ ভাগ সবুজ দরকার। সেই হিসাবটা পুরোপুরি না মিললেও গুগল ইমেজ বলছে ১৯৯৫ সালের দিকে তা মোটামুটি সহনশীল ১৩ দশমিক ৪৫ সবুজের আয়তন ছিল ১৯. ৭৮ কিলোমিটার। কালের পরিবর্তনে বেড়েছে চাহিদা, লোভের বলি হয়েছে সবুজ। ২০২৩ সালে এসে বনভূমির পরিমাণ ৭.০৯। আয়তন ১০ দশমিক ৪২ কিলোমিটার। অর্থাৎ গত ২৮ বছরে গাছের পরিমাণ কমেছে প্রায় সাড়ে ছয় ভাগ। আর সবুজের আয়তন কমেছে প্রায় সাড়ে নয় ভাগ।
তার ওপর জনসংখ্যার বাড়তি চাপ, আধুনিকতার নামে ভবনগুলো মুড়ে দেয়া হচ্ছে কাচে। সব মিলিয়ে এই তাপপ্রবাহের হিসাবটা এখানেই অনেকটা মিলে যায়। কথিত তিলোত্তমা ঢাকায় এখন প্রাণভরে নিশ্বাস নেয়ার জায়গা রমনা পার্ক, বলদা গার্ডেন আর বোটানিক্যাল গার্ডের। তাই কেবল বৈশ্বিক উষ্ণতা নয় দাবদাহের দায় এড়াতে পারে না ঢাকাও।
 
পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার সম্প্রতি সময় সংবাদকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সবকিছু ছাপিয়ে ঢাকার তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে আমার কাছে মনে হয়, আমাদের এখানে লোকালাইজ ফ্যাক্টরগুলো খুবই অ্যাকটিভ।
অর্থাৎ এক তৃতীয়াংশ এ সাপোর্টিং এলিমেন্স নিয়ে এ শহরটি টিকে আছে। অথচ এই শহরের ধারণক্ষমতার তুলনায় তিনগুণ মানুষ বসবাস করছে। এই শহরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য নতুন একটি প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে, সেটি হলো উচ্চতর বাড়ি এবং ওই বাড়িতে কাচের ব্যবহার। এতে ওই কাচ যেমন তাপগ্রহণ করছে আর বিল্ডিংয়ের ভেতরে ব্যবহার করা হচ্ছে হাজার হাজার মেট্রিক টনের এসি। 
তাহলে এবার উপায় কী?
 
পরিবেশবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, এবার দাবদাহে কিছুটা হলেও হুঁশ ফিরেছে কর্তৃপক্ষের। উত্তরের বৃক্ষরোপণের রোডম্যাপ। দক্ষিণের বৃক্ষরোপণের কার্যক্রমের পাশাপাশি আরও কঠোর হতে হবে রাজউককে। বন বিভাগকে এগিয়ে এসে গড়ে তুলতে হবে সমন্বিত উদ্যোগ।
 
স্থপতি ইকবাল হাবিব আরও বলেন, সবজু  বাড়াতে হলে নিতে হবে সিদ্ধান্ত। এটি একটি বিরাট সিদ্ধান্ত। ব্যক্তি থেকে পরিবার, প্লটগ্রহীতা থেকে শুরু করে পুরো নগরজুড়েই করা দরকার পরিকল্পনা। জেলা প্রশাসন, বনবিভাগ, পরিবেশ অধিদফতর অবশ্যই সিটি করপোরেশন ও রাজউকের সবার সংবলিত প্রয়াসে এ কাজটুকু করা যায়। এর জন্য একটা নীতিমালা ও এবং পরিকল্পিত যাত্রা দরকার।  
 
প্রয়োজনে গাছ কাটা আর বৃক্ষরোপণ দুটোকে একটি আইনের আওতায় এনে তা দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদও দেন এ বিশেষজ্ঞ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *