জেরিন বাবার আমড়া বিক্রি করা টাকায় কেনা ৫০টি ভালোমানের ছাতা দিলেন বৃষ্টিতে ভেজা অসহায়দের মাঝে। টানা বৃষ্টির মধ্যে বাজারে (পৌরশহরে) গিয়ে দেখেন এক সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ ভিজে ভ্যান চালাচ্ছেন, একই বয়সের অপর আরেকজন ভিজে ভিজে ঝাল-মুড়ি বিক্রি করছেন।
গত কয়েক দিনের টানা বর্ষায় পেটের তাগিদে এরা ঘর থেকে বের হয়েছেন। সারাদিন বৃষ্টিতে ভেজা কাপড় আর শরীর একাকার হয়ে এক মানবমূর্তি মনে হচ্ছিল তাদের। দেখে মনটা খারাপ হয় জেরিনের। অভিভাবকের সঙ্গে কথা না বলেই বাবার আমড়া বিক্রি করা টাকা দিয়ে কিনে আনলেন ৫০টি ভালোমানের ছাতা। আগে দিলেন ঝাল-মুড়ি বিক্রেতা ও ভ্যানচালককে। এবার পুরো বর্ষায় অসহায়দের ছাতা কিনে দেওয়ার ইচ্ছার কথা জানালেন জেরিন।
পুরো নাম সানজিদা জেরিন সায়ীদা। তিনি যশোরের মনিরামপুর উপজেলার মাঝিয়ালী গ্রামের নজরুল ইসলামের মেয়ে। বাবা পেশায় সহকারী তহশীলদার। জেরিন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্রী।
শুধু ছাতা দিয়ে জেরিন অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছেন তা নয়। গত বছর করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে জেরিন মাটির ব্যাংকে জমানো টাকা দিয়ে খাদ্যসামগ্রী কিনে ভ্যান ভাড়া করে অসহায়দের ঘরে নিজেই পৌঁছে দিয়েছেন। এছাড়া প্রাকৃতিক যে কোনো দুর্যোগে নিজের সাধ্যমতো অসহায়দের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়ান জেরিন। স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে বেশ কয়েকবার জেরিনের এ ধরনের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে।
চাঁদপুর গ্রামের মরিয়ম খাতুন বলেন, লকডাউনের সময় স্বামীর কাজ না থাহায় কষ্টের সময় চাল তরিতরকারি দিল জেরিন মা।
শুধু ময়িরম নয়, খেদাপাড়া গ্রামের রুপালী খাতুন, শামছুন্নাহার, কুলছুম বেগম, জুড়ানপুর গ্রামের বিজন দাস, তাহেরপুরের তাসলিমা, রুপবানসহ একাধিক নারী-পুরুষ জেরিনের প্রশংসা করছিলেন।
জেরিন বলেন, শুধু নিজেরা ভালো থাকার মধ্যে সার্থকতা নেই। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার মজাই আলাদা। নিজের জমানো কিংবা বাবার কাছ থেকে নেওয়া টাকায় কেনা খাদ্য সামগ্রীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নিয়ে অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। ভবিষ্যতেও এ ধরনের কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন জেরিন।
Array