আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠক ‘অত্যন্ত ইতিবাচক’ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। রাশিয়ান সংবাদ সংস্থা আরআইএ নভোস্তি’র বরাতে শনিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
আলোচনার পর দুই নেতা কেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তা ব্যাখ্যা করে পেসকভ বলেন, ‘উভয়েই বিস্তৃত বিবৃতি দিয়েছেন, তাই এর কোনো প্রয়োজন ছিল না। দুই নেতার এই কথোপকথন শান্তির পথ খুঁজে বের করতে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে একসাথে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেবে।’
এর আগে, স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দুপুর ১টা ৮ মিনিটে আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজে এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসন সামরিক ঘাঁটিতে বহুল প্রতিক্ষীত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এই দুই নেতার। প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন তারা।
এদিকে বৈঠক শেষে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পুতিনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘১০-এ ১০। আমাদের মধ্যে দারুণ মিল ছিল। আলোচনা ইতিবাচক হয়েছে। এখন ইউরোপের দেশগুলোকে সম্পৃক্ত করে একটি চূড়ান্ত চুক্তির দায়িত্ব জেলেনস্কির।’
আগামীতে রাশিয়া ও ইউক্রেন সরাসরি আলোচনায় বসবে বলেও জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেই আলোচনায় পুতিন ও জেলেনস্কি থাকবেন। এদিকে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে তিনিও আন্তরিকভাবে আগ্রহী। এই যুদ্ধকে ‘ট্র্যাজেডি’ হিসেবেও উল্লেখ করে তিনি। বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধের জন্য এই যুদ্ধের মূল কারণগুলো নিরসন করতে হবে।’
জানা গেছে, বৈঠক শেষে ট্রাম্প ও পুতিন আলাস্কা ছাড়ছেন। পুতিন এরই মধ্যে উড়োজাহাজে উঠেছেন। পুতিন মস্কোর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার কিছুক্ষণ পর ট্রাম্পও তাকে বহনকারী উড়োজাহাজে উঠে যান। কিছুক্ষণের মধ্যেই উড়োজাহাজ দুটি নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করবে।
এর আগে স্থানীয় সময় শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে আলাস্কার এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসন সামরিক ঘাঁটিতে ট্রাম্পকে বহনকারী উড়োজাহাজ অবতরণ করে। এর কিছুক্ষণ পর সেখানে পৌঁছায় পুতিনকে বহনকারী উড়োজাহাজও। এরপর বিমানবন্দরে পুতিনকে লালগালিচায় উষ্ণভাবে বরণ করে নেন ট্রাম্প। পরে দুই নেতার মধ্যকার বহুল প্রতীক্ষিত তিন ঘণ্টার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
ট্রাম্প বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে অগ্রগতি অর্জনের জন্য আমাদের খুব ভালো সুযোগ রয়েছে।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি এখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে কথা বলবেন। চুক্তি ‘শেষ পর্যন্ত’ তাদের ওপর নির্ভর করবে এবং তাঁদের সম্মত হতে হবে।
চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো চুক্তি নেই উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ‘ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু আমরা শেষ পর্যায়ে পৌঁছাইনি’।
প্রসঙ্গত, ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর দাবি, পুতিন আলাস্কায় গিয়েছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে। তিনি চান, ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার আধিপত্য বজায় থাকুক। আবার ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কও ভাল থাকুক। আমেরিকার মূল ভূখণ্ডের বাইরের বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আলাস্কার ‘জয়েন্ট বেস এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসন’! ৬৪ হাজার একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ওই ঘাঁটিতেই শুক্রবার মুখোমুখি বসেছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দুই রাষ্ট্রনেতা।