প্রাচীন মিশরীয় সমাধিতে মিললো ৪ হাজার বছরের পুরোনো হাতের ছাপ

অনলাইন ডেস্ক:   প্রাচীন মিশরের একটি সমাধিতে ব্যবহৃত মাটির তৈরি একটি পূজার মডেলের ওপর ৪ হাজার বছর আগের একটি হাতের ছাপ আবিষ্কৃত হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিটজউইলিয়াম মিউজিয়ামের গবেষকরা আসন্ন একটি প্রদর্শনীর প্রস্তুতির সময় এই চাঞ্চল্যকর আবিষ্কারটি করেন। এ বছরের শেষের দিকে ওই প্রদর্শনী শুরু হবে।

হাতের ছাপটি পাওয়া গেছে একটি ‘সোল হাউস’ বা ‘আত্মার ঘর’-এর নিচের অংশে। এটি একটি বাড়ি আকৃতির মাটির মডেল, যা সাধারণত সমাধিতে পাওয়া যায় এবং বিশ্বাস করা হয় এটি মৃত ব্যক্তির আত্মার জন্য থাকার স্থান হিসেবে কাজ করতো।

এই মডেলের সামনের অংশটি খোলা, যেখানে খাদ্য উৎসর্গ যেমন রুটি, লেটুস বা ষাঁড়ের মাথা রাখা হতো। এটি আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২০৫৫ থেকে ১৬৫০ সালের মধ্যে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে। মডেলটি নিয়ে বিস্তারিত গবেষণার মাধ্যমে বোঝা গেছে যে প্রায় চার হাজার বছর আগে এটি কীভাবে তৈরি হয়েছিল।

গবেষণায় দেখা গেছে, অজ্ঞাতনামা কোনো কুমার প্রথমে কাঠের ছোট ছোট কাঠির মাধ্যমে একটি দুইতলা কাঠামো তৈরি করেন এবং পরে সেটি কাদামাটি দিয়ে ঢেকে দেন। আগুনে পোড়ানোর সময় কাঠের কাঠামো পুড়ে যায়। সোল হাউসটির নিচে পাওয়া ওই হাতের ছাপটি সম্ভবত তখনই তৈরি হয়েছিল, যখন কুমার কাদামাটি শুকানোর আগেই সেটি সরাতে গিয়ে মডেলটি স্পর্শ করেছিলেন।

ফিটজউইলিয়াম মিউজিয়ামের জ্যেষ্ঠ কিউরেটর হেলেন স্ট্রাডউইক বলেন,

‘আমরা আগেও ভেজা বার্নিশ বা কফিনের সাজসজ্জায় আঙুলের ছাপ দেখেছি, কিন্তু এমন পূর্ণাঙ্গ হাতের ছাপ পাওয়া খুবই বিরল এবং রোমাঞ্চকর।’

তিনি আরও বলেন,

‘এটি সেই কারিগরের ছাপ, যিনি কাদা শুকানোর আগে এটিকে স্পর্শ করেছিলেন। আমি এর আগে কখনো কোনো মিশরীয় বস্তুতে এত পরিষ্কার একটি সম্পূর্ণ হাতের ছাপ দেখিনি। আপনি সহজেই কল্পনা করতে পারেন, তিনি এটি তুলে ওয়ার্কশপ থেকে বের করে রোদে শুকাতে নিয়ে যাচ্ছিলেন।’

স্ট্রাডউইক মনে করেন,

‘এ ধরনের আবিষ্কার আমাদের সরাসরি সেই মুহূর্তে নিয়ে যায়, যখন বস্তুটি তৈরি হচ্ছিল এবং সেই মানুষটির কাছে নিয়ে যায়, যিনি এটি বানিয়েছিলেন—যেটিই আমাদের প্রদর্শনীর মূল লক্ষ্য।’

প্রাচীন মিশরের সময়কার বিপুল পরিমাণ পটারি (মাটির জিনিসপত্র) টিকে আছে, কারণ তখন কেরামিকস ছিল নিত্যপ্রয়োজনীয় ও শোভাময় বস্তু হিসেবে ব্যাপক ব্যবহৃত। খাদ্য ও পানীয় সংরক্ষণে ব্যবহৃত পটারি প্রায়শই সমাধিতে স্থান পেত।

তুতানখামেনের মতো মিশরীয় শাসকদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানা গেলেও, তাঁদের সমাধিতে আবিষ্কৃত শিল্পকর্মগুলোর পেছনের সাধারণ কারিগরদের গল্প প্রায়ই উপেক্ষিত থেকে যায়। মিউজিয়ামের মতে, কাদামাটি সহজলভ্য এবং পটারি কমমূল্য হওয়ায় কুমারদের সামাজিক মর্যাদা তেমন ছিল না।

এই সোল হাউসটি ‘মেইড ইন এনসিয়েন্ট ইজিপ্ট’ (প্রাচীন মিশরে নির্মিত) নামক প্রদর্শনীর অংশ হিসেবে কেমব্রিজের ফিটজউইলিয়াম মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হবে। প্রদর্শনীটি শুরু হবে ৩ অক্টোবর। এটি মূলত প্রাচীন মিশরের সাধারণ কারিগরদের অজানা গল্প তুলে ধরবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *