অনলাইন ডেস্ক : ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিরাজগঞ্জে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনা নদীর পানি।
সেইসঙ্গে জেলার নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। মাত্র সপ্তাহের ব্যবধানে পানির তোড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ৫ শতাধিক বাড়ি ও ফসলি জমি।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ১২ ঘণ্টায় ২১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে কাজিপুর মেঘাই পয়েন্টে নদীর পানি বেড়েছে ২৪ সেন্টিমিটার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যমুনায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার কাজিপুর উপজেলার খাসরাজবাড়ী, সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ও শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর এবং কৈজুরী ইউনিয়নে এক সপ্তাহ ধরে তীব্র ভাঙন চলছে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিওব্যাগ ফেললেও বর্ষা মৌসুমে তা কোনো কাজেই আসছে না।
বরং প্লাবিত হচ্ছে নদীতীরবর্তী বিভিন্ন এলাকা। এছাড়াও চলনবিলসহ ফুলজোড়, ইছামতি, হুড়াসাগর, বড়াল, গোহালা, গুমানি নদীসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়ছে।
খাস রাজবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দক্ষিণ খাসরাজবাড়ী গুচ্ছগ্রামের ৬০-৭০টি বাড়িঘর ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গুচ্ছগ্রামের মানুষগুলো ফের ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়া মুন্সী জানান, এ ইউনিয়নে এক মাসে দুই শতাধিক বাড়িঘর ও তিন হাজার একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে হাটবয়ড়া, দোগাছি, বড়কয়ড়া, ছোটকয়ড়া, চন্ডাল বয়ড়া, বেড়াবাড়ি, কৈগাড়ি, দোরতা ও বর্ণি গ্রামের আরও পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর, চার কিলোমিটার পাকা রাস্তা, কয়েকশ একর ফসলি জমি, বন্যা ও দুর্যোগকালীন আশ্রয়কেন্দ্র মুজিবকেল্লা, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর অধীন ১২৬টি ব্যারাক, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ছয়টি সরকারি প্রাইমারি স্কুল।
কৈজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন খোকন বলেন, কয়েকদিন ধরে হাঁটপাচিলে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনে এসে তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন ইউএনও। এলাকাবাসী ত্রাণ চায় না, এক বান্ডিল টিনও চায় না। তারা চায় নদীভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান বলেন, জালালপুর ও কৈজুরী ইউনিয়নের হাঁটপাচিল এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন কবলিতদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের সহযোগিতা করা হবে।
এদিকে পাউবো সূত্র জানায়, ২০২১ সালে যমুনার ভাঙনরোধে শাহজাদপুরের এনায়েতপুর থেকে কৈজুরী পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার নদী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৬৫০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও মাত্র অর্ধেক শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, নদীভাঙন রোধে আমরা প্রকল্পের পাশাপাশি জিওটিউব ডাম্পিং শুরু করেছি। এছাড়া পাউবোর ড্রেজার দিয়ে চ্যানেলটিকে প্রশস্ত করার চেষ্টা করছি। নদীর গতিপথ পরিবর্তনের জন্য খনন কাজ চলছে। সেই সঙ্গে ভাঙনরোধে কাজ করা হচ্ছে।
Array