মহানগর ডেস্ক: মা, মাটি ও মানুষ; জীবনে এ তিন নিয়ে চলেছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ১০ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় ডা. জাফরুল্লাহ। পরিবারে বড় ভাই নামেই পরিচিত ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডা. মামুন মোস্তাফী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এক বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজানে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার শিক্ষক ছিলেন বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেন। পিতা-মাতার ১০ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।
ডা. জাফরুল্লাহ ঢাকার বকশীবাজারের নবকুমার স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট উত্তীর্ণের পর ১৯৬৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং ১৯৬৭ সালে বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস থেকে এফআরসিএস প্রাইমারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস-এ এফআরসিএস পড়াকালীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি চূড়ান্ত পর্ব শেষ না-করে লন্ডন থেকে ভারতে ফিরে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য আগরতলার মেলাঘরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন। এরপর ডা. এম এ মবিনের সাথে মিলে সেখানেই ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট ‘বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন।
স্বাধীনতার পর মেলাঘরের সেই ফিল্ড হাসপাতালকে ঢাকার ইস্কাটনে নিয়ে আসেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী, পরে গ্রামকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুরূপে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘চল গ্রামে যাই’ এই স্লোগান নিয়ে হাসপাতালটি সাভারে স্থানান্তরিত হয়। তখন এর নামকরণ হয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। স্বাধীনতার পর নারীর ক্ষমতায়নে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রায় অর্ধেক কর্মী নেয়া হয়েছিল নারীদের মধ্য থেকে।
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে জীবনের নানা পর্বে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার বা সম্মান পেয়েছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।
এছাড়াও তিনি ফিলিপাইন থেকে রামন ম্যাগসাইসাই (১৯৮৫) এবং সুইডেন থেকে বিকল্প নোবেল হিসেবে পরিচিত রাইট লাভলিহুড (১৯৯২), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ইন্টারন্যাশনাল হেলথ হিরো’ (২০০২) এবং মানবতার সেবার জন্য কানাডা থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন। ডা. জাফরুল্লাহ ২০২১ সালে আহমদ শরীফ স্মারক পুরস্কার পান।