নিউজ ডেস্ক:দিন দিন বেড়েই চলেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বকেয়া অর্থের পরিমাণ। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এবং বেসরকারি বিভিন্ন এয়ারলাইনসের কাছে ইতোমধ্যে বেবিচকের ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি বকেয়া পড়েছে। বার বার তাগিদ দিয়েও ওই অর্থ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে। বরং বছরের পর বছর ধরে কেবল বিমানের কাছেই বেবিচকের বকেয়া আটকে আছে ৩ হাজার ৯২ কোটি ৬৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৫২ টাকা। বিমানের কাছে বেবিচকের বর্তমান পাওনার মধ্যে মূল বিল ৯৮৬ কোটি ৪৬ লাখ ৬৬ হাজার ৮৭৮ টাকা। ভ্যাট ও আয়কর ২৭১ কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার ২৯৯ টাকা। তার বাইরে বকেয়ার ওপর অতিরিক্ত চার্জ (সারচার্জ) ৩ হাজার ১৯২ কোটি ৪৩ লাখ ২৩ হাজার ৫০০ টাকা। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশের ৩টি আন্তর্জাতিকসহ মোট ৮টি বিমানবন্দর বেবিচকের অধীনে রয়েছে। সংস্থাটির আদায় করা অ্যারোনটিক্যাল চার্জগুলোর মধ্যে রয়েছে বিমানের ল্যান্ডিং চার্জ, রুট নেভিগেশন সার্ভিস চার্জ, বোর্ডিং ব্রিজ ব্যবহার চার্জ ও এমবারকেশন। আর নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জগুলো হলো গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং, চেক-ইন কাউন্টার ভাড়া, কার পার্কিং ও এভিয়েশন ক্যাটারিং সার্ভিস। পুরোনো বকেয়া নিয়ে বেবিচক দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) শরণাপন্ন হলেও এখনো সুফল মেলেনি।
সূত্র জানায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বেবিচকের পাওনা পরিশোধ না করেই চলতি বছর সর্বোচ্চ লাভ দেখিয়েছে। বিমান বলছে ওসব বকেয়া অনেক পুরোনো। গত দুই বছরে বিমান বেবিচকের কোনো ধরনের চার্জ বকেয়া রাখেনি। পরিশোধ করেছে জেট ফুয়েলের (পদ্মা অয়েল) সব খরচ। তবে আগের বকেয়া পরিশোধের পরিকল্পনা বিমানের নেই। কিন্তু বেবিচকের দাবি- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস থেকে অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল মিলে ৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। কিন্তু পাওনা পরিশোধ না করেই চলতি বছর সর্বোচ্চ লাভ দেখিয়েছে। বিপুল অঙ্কের ওই দেনা পরিশোধ না করেই টানা দ্বিতীয় বছরের মতো লাভ দেখিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।
সূত্র আরো জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস নিট লাভ দেখায় ১৫৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর ২০২১-২২ অর্থবছরের ৮ মাসে (ফেব্রুয়ারি-ডিসেম্বর পর্যন্ত) প্রতিষ্ঠানটি লাভ দেখায় ৩২৮ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ৩২৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল। আর গত ১২ বছরের হিসাব করলে এটাই বিমানের সর্বোচ্চ মুনাফা। কিন্তু বেবিচকের দেনার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে কোনো তথ্য নেই।
এদিকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বকেয়া কেন আদায় হচ্ছে না সে বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল। বিগত ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রথম দফায় চিঠি দেয়া হলেও মন্ত্রণালয় কোনো প্রতিক্রিয়া বা জবাব দেয়নি। প্রায় ১৯ মাস অপেক্ষার পর দ্বিতীয় দফায় চিঠি দেয় দুদক। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। দুদকের চিঠিতে বলা হয়, পুঞ্জীভূত বকেয়ার কারণ, বকেয়া আদায়ের জন্য গৃহীত ব্যবস্থার বিবরণ দুর্নীতি দমন কমিশনকে অবহিত করার জন্য সূত্রস্হ স্মারকমূলে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। ওই বকেয়া আদায়ের জন্য কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা জানানোর জন্য কমিশন কর্তৃক চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় ৭ কার্যদিবসের মধ্যে বকেয়া আদায়ের জন্য কী কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তার জবাব পাঠানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুনরায় অনুরোধ করা হলো। কিন্তু ওই ৭ কর্মদিবস বহু আগে পার হলেও একনো সাড়া মেলেনি।
এদিকে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের মতে, বেবিচকের দেনা বাদ রেখে বিমানের লাভ-ক্ষতি হিসাবের কোনো সুযোগ নেই। একটি এয়ারলাইনসের খরচের ৫০ ভাগই বেবিচকের চার্জ ও তেলের দামের পেছনে যায়। পৃথিবীর সব দেশের এয়ারলাইনসগুলোই তাদের আর্থিক প্রতিবেদন সর্বসমক্ষে প্রকাশ করে। কিন্তু বাংলাদেশে এটা করা হয় না। ২০০৮ সালে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার পাহাড়সম দেনায় পড়ে বিমান। ওই সময় প্রতিষ্ঠানটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করে ১ হাজার ২১৬ কোটি টাকার সারচার্জ মওকুফ পায়। বাকি ৫৭৩ কোটি টাকা পরিশোধ করে দায়মুক্তি পায় বিমান।
অন্যদিকে চিঠির বিষয়ে দুদক সচিব মো.মাহবুব হোসেন জানান, যে কোনো অভিযোগের বিষয়ে দুদক বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। সে অনুযায়ী দুদক ব্যবস্থা নেবে।