• আজকের পত্রিকা
  • ই-পেপার
  • আর্কাইভ
  • কনভার্টার
  • অ্যাপস
  • একজন সাহসী যোদ্ধা, সমাজসেবক বীরমুক্তিযোদ্ধা মির্জা খয়বার হোসেন 

     obak 
    24th May 2022 6:11 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    হামিদুল আলম সখা

     বিংশ শতাব্দীর ৩০’র দশকের  মধ্যভাগে অর্থাৎ  ১৯৩৫ সালের ১২ অক্টোবর খুলনা শহরের বড় বয়রায় সম্ভ্রান্ত মির্জা পরিবারে তার জন্ম। পিতা মির্জা সোলায়মান হোসেন, মাতা রিজিয়া বেগম।
    মির্জা খয়বার হোসেন  খুলনা জিলা স্কুল থেকে মেট্রিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন  এবং এইচ এস সি পাস করেন ঢাকা কলেজ থেকে এবং একই কলেজ থেকে গ্রেজুয়শন অর্জন করেন।
     ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে নিজের  জীবনকে তুচ্ছ করে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে রণাঙ্গনে অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য মির্জা খয়বার হোসেন।
     স্বাধীনতার উদিত লাল সূর্য, লাল সবুজের আমাদের অস্তিত্বের পতাকা আর আমাদের পরিচয়ের স্বাধীন মানচিত্র তো জাতির পিতার নেতৃত্বে জাতির এই সূর্য সন্তানদের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের ফসল।
    মুক্তিযুদ্ধকালীন খুলনা শহর স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন খুলনার আওয়ামী রাজনীতির অন্যতম পথিকৃত বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য প্রয়াত জননেতা বয়রার কৃতি সন্তান মির্জা খয়বার হোসেন।
     মুসলিম লীগের দূর্ভেদ্য ঘাঁটি খুলনার মাটিতে মুজিব আদর্শকে শক্তিশালী ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করতে অনবদ্য অবদান রাখেন মির্জা খয়বার হোসেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ নামক আজকের এই স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে বাঙালীর মুক্তির সনদ ৬ দফার প্রচার, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান,৭০’ এর সাধারণ নির্বাচন সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
    দুই।
    সারাদেশের ন্যায় খুলনার রাজপথ ও উত্তাল হয়ে ওঠে। খুলনার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে ২ রা মার্চ শহীদ হাদীস পার্কে এক বিশাল জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে যারা বক্তব্য রাখেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মির্জা খয়বার হোসেন।প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রস্তুতি শুরু হয়। বিভিন্ন অস্ত্রের দোকান লুট করা হয় অস্ত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। বন্দুকের দোকান লুটে নেতৃত্ব দেন সে সময়ের খুলনার প্রথম সারির ছাত্রনেতারা।খুলনা শহর স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান মির্জা খয়বারের উদ্যোগে ও অর্থায়নে তার বটিয়াঘাটাস্থ পরিত্যক্ত একটি বাড়িকে বোমা বানানোর জন্য নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয় এবং সেখানেই বোমা বানানোর কারখানা গড়ে তোলা হয়। বোমা বানানোর সকল সরঞ্জামাদি সংগ্রহ এবং সরবরাহ করতেন মির্জা খয়বার হোসেন নিজে।
     বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে স্মরণকালে সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষন দেন। মাত্র আঠারো মিনিটের ভাষনটিতে মুক্তিযুদ্ধের নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন যার যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। তিনি বলেন,
    “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
    এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
    বাঙালির অবিসংবাদী নেতা বঙ্গবন্ধু
    পূর্ব বাংলার জনগণকে ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলার আহবান জানালেন।আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলার নির্দেশ দিলেন বঙ্গবন্ধু।পুরো পূর্ব পাকিস্তান চলতে লাগল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে।পাকিস্তানী শাসকের ভীত কেঁপে উঠল বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠের ঘোষণায়। স্বাধীনতাকামী জনগণের কাছে বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চের ভাষণ ছিল স্বাধীনতার গ্রীণ সিগন্যাল। এই ঘোষণার পর সারাদেশে মুক্তিকামী মানুষ স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা শুরু করলেন। উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ মির্জা খয়বার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
     প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ২১ শে মার্চ খুলনা শহীদ হাদীস পার্কে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর উদ্যোগে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ শেষে মির্জা খয়বার হোসেন, মুনসুর আলি এবং কামরুজ্জামান টুকু সহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শুরু হয়।
    ২৫ শে মার্চের কালরাত্রে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালীদের উপর হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়ে।। বঙ্গবন্ধু ২৫ শে মার্চ দিবাগত রাত ১ টা ২৫ মিনিটের দিকে পাকিস্তানি আর্মির হাতে গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার এই ঘোষণা সারাদেশের ন্যায় খুলনাতেও পাঠানো হয়। বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতার ঘোষণা খুলনায় টেলিফোনের মাধ্যমে পাঠানো হয় তৎকালীন শহর স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান মির্জা খয়বার হোসেনের কাছে। এই ঘোষণা দ্রুত মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার ও নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু। মির্জা খয়বার হোসেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। তিনি ঐ রাতেই মাইকিং করে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা খুলনা শহরের সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌছে দেন। পাশাপাশি স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এবং স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর নেতৃবৃন্দকেও বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশের ‘স্বাধীনতা ঘোষণার’ কথা জানান মির্জা খয়বার হোসেন। উল্লেখ্য তৎকালীন সময়ে খুলনার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের চলাচলের জন্য প্রধান বাহন ছিল মির্জা খয়বার হোসেনের জিপ। এই জিপে ঘুরে ঘুরে মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করেছেন আওয়ামীলীগ ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
    তিন।
    মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক হাজার হাজার স্বাধীনতাকামী যুবক ভারত যান। এদের জন্য ভারতের সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন শরনার্থী শিবির এবং যুব অভ্যর্থনা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয় মুজিব নগর সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নেতৃত্বে। এসব যুব অভ্যর্থনা কেন্দ্রের কোনো কোনোটিতে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক জড় হওয়া যুবকদের স্বল্পকালীন সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধের জন্য প্রেরণ করা হয়। আবার আগ্রহী অনেক যুবককে বীরভূম,চাকুলিয়া প্রভৃতি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য প্রেরণ করা হয়। এসব যুব অভ্যর্থনা কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্ব পান ৭০’র নির্বাচনে বিজয়ী জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যগণ এবং বিভিন্ন এলাকার আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃববৃন্দ।অধিকাংশ ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন নির্বাচিত এম.এন.এ এবং এম.পি.এ গণ। তবে মির্জা খয়বার হোসেন নির্বাচিত এম.এন.এ কিংবা এম.পি.এ না হয়েও ক্যাম্প পরিচালনার দায়িত্ব পান। মির্জা খয়বার হোসেন ছিলেন বশিরহাটের “তেতরা ক্যাম্প/ “ভ্যাবলা ক্যাম্প” এর ক্যাম্প ইন-চার্জ। তিনি ছিলেন খুলনার মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সারির কয়েকজন সংগঠকের একজন।
    চার।
    ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে স্বপরিবারে খুনী চক্র হত্যা করার পর সারা বাংলাদেশে বিশেষ করে ১৯ জেলার আওয়ামীলীগ এর প্রধান প্রধান নেতাদের গ্রেফতার করা হয়।খুলনায় মির্জা খয়বার হোসেনসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ গ্রেফতার করা হয়।অনেককে ছেড়ে দিলেও প্রায় সাড়ে চার বছর বীরমুক্তিযোদ্ধা মির্জা খয়বার হোসেনকে কারাগারে দিনযাপন করতে হয়েছে।
    মির্জা খয়বার হোসেনকে ৭৯’র প্রহসনের নির্বাচনে যখন খুলনা-৪ আসনের আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয় তখনো তিনি অবৈধ স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়ার কারাগারে বন্দী ছিলেন।নির্বাচনের মাত্র অল্প কয়েকদিন পূর্বে তিনি জেলখানা থেকে মুক্তি পান। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে আওয়ামীলীগকে সুসংগঠিত করেন। দলের চরম দুঃসময়ে শহর আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন। কর্মিবান্ধব নেতা ছিলেন।দলের কর্মিদের বিপদে, আপদে খোঁজখবর নিতেন।দলের পিছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছেন।
    খুলনা শিশু ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মির্জা খয়বার হোসেন ছিলেন।খুলনা শিশু হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরবর্তীতে সাধারণ সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করেন। সোনাডাঙ্গা প্রি ক্যাডেট স্কুল (বর্তমান খুলনা কলেজিয়েট স্কুল) এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। তাঁর নেতৃত্বে সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় স্কুলটি অল্পদিনের মধ্যেই সুনাম অর্জন করে। ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক মির্জা খয়বার হোসেন স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই ছিলেন খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট(১৯৭২-১৯৭৬) এবং খুলনা রেডক্রসের চেয়ারম্যান ছিলেন।তিনি নৌপরিবহন মালিক সমিতির চেয়ারম্যানও ছিলেন।
    মির্জা খয়বার হোসেন তার নিজের সন্তানের মতো অতিযত্নে দু’টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন।একটি হলো খুলনা কলেজিয়েট স্কুল অন্যটি হলো খুলনা শিশু হাসপাতাল।এ দু’টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মধ্যদিয়ে মির্জা খয়বার হোসেন তিনি একজন সমাজ সেবক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন।এই স্কুল থেকে এস এস সি পাশ করে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী দেশের বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করছে।অনেকে চাকুরী,ব্যবসা করে সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। অন্যদিকে খুলনা শিশু হাসপাতালে শিশুরা প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছে। দানবীর,সমাজ সেবক বীরমুক্তিযোদ্ধা মির্জা খয়বার হোসেন এই দুইটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বেঁচে থাকবেন চিরকাল।
     মির্জা খয়বার হোসেন ৫  ভাই ও ৫ বোনের মধ্যে ২য়। বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা খয়বার হোসেনের পুত্র কন্যারা হলেন ,চম্পা(করোনা আক্রান্তে শহীদ), চঞ্চল, শম্পা,স্বপ্না,লীনা ,শান্ত ।মির্জা খয়বার হোসেনের ২য় পক্ষের দুই কন্যা মুক্তি ও রত্না,১ পুত্র সাঈদ (মৃত)। মির্জা খয়বার হোসেন এর প্রথম স্ত্রী করিমা খাতুন সম্প্রতি বার্ধক্য জনিত কারণে মৃত্যু বরণ করেছেন। ২য় স্ত্রী হোসনে আরা এখনো জীবিত আছেন। তবে মির্জা খয়বার হোসেনের পুত্র কন্যা কেউ আওয়ামী লীগের কোন পদে নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্নেহধন্য, বীরমুক্তিযোদ্ধা মির্জা খয়বার হোসেন ১৯৯৫ সালের ২৬ জুলাই মৃত্যু বরণ করেন।তার নামাজে জানাজা খুলনা হাদিস পার্কে অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা বয়রায় পারিবারিক গোরস্থানে এই সমাজ সেবক , দানবীর দাফন করা হয়।
    বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বিশেষ করে খুলনার মুক্তিযুদ্ধে এবং সমাজসেবক হিসেবে বীরমুক্তিযোদ্ধা মির্জা খয়বার হোসেন চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
    #
    তথ্যসূত্র: খুলনার মুক্তিযুদ্ধ আর্কাইভ ও মির্জা খয়বার হোসেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের সহযোগিতা।
    লেখক: সম্পাদক, ত্রৈমাসিক মহুয়া ও সাব এডিটর, সাপ্তাহিক শীর্ষ খবর।
    সদস্য, বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, কেন্দ্রীয় কমিটি।
    আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
    Jugantor Logo
    ফজর ৪:২৭
    জোহর ১২:০৫
    আসর ৪:২৯
    মাগরিব ৬:২০
    ইশা ৭:৩৫
    সূর্যাস্ত: ৬:২০ সূর্যোদয় : ৫:৪২

    আর্কাইভ

    May 2022
    M T W T F S S
     1
    2345678
    9101112131415
    16171819202122
    23242526272829
    3031