চট্টগ্রামে পাঁচ বছর আগের চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা মামলার আসামি সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের ভারতীয় প্রেমিকা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও নথি পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার বিকেলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা গণমাধ্যমকে এ তথ্য দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের কাছ থেকে বাবুল আক্তারের ভারতীয় প্রেমিকার বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি।মামলার তদন্তকাজকে এগিয়ে নিতে এসব তথ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে ওই নারী বর্তমানে কোথায় আছেন, সেটি নিয়ে আমাদের কোনো তথ্য দিতে পারেনি সংস্থাটি।’
ওই নারীর অবস্থানের বিষয়ে জানতে আরো তথ্য চেয়ে ইউএনএইচসিআর বরাবার চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানান পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘মামলার এজাহারে গায়ত্রী নামের ওই নারীর তথ্য রয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে আমরা মনে করছি। এ জন্য ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশপ্রধান বরাবর রোববার একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে তার বর্তমান অবস্থানসহ একাধিক বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ২৩ মে বাবুলের কথিত এই প্রেমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে ইউএনএইচসিআরকে চিঠি দিয়েছিল পিবিআই। গত জুলাই মাসের শেষ দিকে ওই চিঠির উত্তর পায় সংস্থাটি।
গত মে মাসে জানা গিয়েছিল, বাবলুকে তার কথিত প্রেমিকা দুটি বই উপহার দেন। যা ফরেনসিক পরীক্ষা করতে পাঠাতে চায় পিবিআই।
তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, ‘বই দুটি আমরা জব্দ করেছি। এগুলোতে কিছু লিখিত বিষয় রয়েছে, যেগুলো পরকীয়ার সম্পর্ক নির্দেশ করে। মামলার তদন্তের স্বার্থে বই দুটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে। এ জন্য আদালতের অনুমতি লাগবে। আমরা শিগগিরই পরীক্ষার জন্য আদালতে আবেদন করব।’
২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় মাহমুদা খানম ওরফে মিতুকে।
ওই ঘটনায় বাদী হয়ে বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। তাতে তিনি বলেন, তার জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রী আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে থাকতে পারেন। তবে সপ্তাহ দুয়েকের মাথায় মাহমুদা হত্যার তদন্ত নতুন মোড় নেয়। অব্যাহতভাবে মাহমুদার মা–বাবা এই হত্যার জন্য বাবুল আক্তারকে দায়ী করে আসছেন।
পরে পিবিআই দাবি করে, মিতু হত্যায় বাবুল জড়িত হওয়ার প্রমাণ মিলেছে। এরপরই আগের মামলার চার্জশিট ও নতুন করে মামলা দায়ের হয়।
ওই এজহারে বাবুল আক্তারের সঙ্গে ইউএনএইচসিআরের ওই এনজিও কর্মীর পরকীয়া ছিল বলে অভিযোগ করেন মামলার বাদী ও মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।
এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গায়ত্রী অমর সিং নামে এক ভারতীয় নারীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের কারণে বাবুল-মিতুর দাম্পত্য অশান্তি চরমে পৌঁছে। মিতু বাবুলের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু হয়। এর পরই কর্মক্ষেত্রে ও সমাজে সম্মান হারানোর ভয়ে মিতুকে পরিকল্পিতভাবে খুন করে চিরতরে তার মুখ বন্ধ করে দেন বাবুল।
মামলার এজজার ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গায়ত্রী অমর সিং জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা-ইউএনএইচসিআরের ফিল্ড অফিসার হিসেবে কক্সবাজারে কর্মরত ছিলেন। বুল আক্তার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কক্সবাজার জেলায় চাকরি করার সময় তার সঙ্গে গায়েত্রীর দেখা হয়। তখনই তার সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পর্ক হয়। ব্যক্তিগত জীবনে গায়ত্রী বিবাহিত এবং তার একটি ছেলে রয়েছে।
তারা কক্সবাজারের মারমেইড বিচ রিসোর্টে একান্ত সময় কাটিয়েছেন বলেও পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে।
মিতুর বাবার দায়ের করা হত্যা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে,বাবুল-গায়ত্রী সম্পর্কের বিষয়টি জানা যায় ২০১৪ সালে। সেসময় বাবুল সুদানে জাতিসংঘের মিশনে যান। তখন তার বাসায় দুটি বই উপহার পাঠান গায়ত্রী। এছাড়াও বাংলাদেশে রেখে যাওয়া বাবুলের মোবাইলে ২৯টি মেসেজও পাঠান তিনি।
সর্বশেষ মিতু হত্যার কয়েকমাস আগে বাবুল একটি ট্রেনিংয়ে থাকা অবস্থায় গায়েত্রী তার বাসায় দুইটি বই উপহার পাঠান। বই দুটির নাম-তালিবান ও বেস্ট কেপ্ট সিক্রেট।
তালিবান বইটির ৩ নম্বর পৃষ্ঠায় গায়েত্রী নিজ হাতে একটি বার্তা লিখে দেন। সেখানে লেখা ছিল, ‘আমাদের ভালো স্মৃতিগুলো অটুট রাখতে তোমার জন্য এই উপহার। আশা করি এই উপহার আমাদের বন্ধনকে চিরস্থায়ী করবে। ভালোবাসি তোমাকে, গায়ত্রী।’
একই বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় গায়ত্রী তাদের প্রথম দেখা, প্রথম একসঙ্গে কাজ করা, প্রথম কাছে আসা, মারমেইড হোটেলে ঘোরাফেরা, রামু মন্দিরে প্রার্থনা, রামুর রাবার বাগানে ঘোরাফেরা এবং চকরিয়ায় রাতে সমুদ্রের পাশ দিয়ে হাঁটা ইত্যাদি স্মৃতির কথা উল্লেখ ছিল।
এছাড়াও বেস্ট কেপ্ট সিক্রেট নামের বইয়ের ২য় পাতায় গায়েত্রীর নিজ হাতে ‘তোমার ভালোবাসার গায়ত্রী (ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করা)’।
Array