৪ আগস্ট ২০২৪: অসহযোগ আন্দোলনে উত্তাল দেশ

আনলাইন ডেস্ক:    শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ঠিক একদিন আগে, বেপরোয়া হয়ে ওঠে রাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীগুলো। এদিন আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না করার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটও খারিজ করে দেয়া হয়। ফলে ৪ আগস্ট জঙ্গিদমন কায়দায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারতে থাকে বিভিন্ন বাহিনী। এরই মধ্যে ঘোষণা হয়, মার্চ টু ঢাকা।

আন্দোলনের এই পর্যায়ে এসে, এক দফা দাবিতে অনঢ় হয় ছাত্র-জনতাসহ দেশের আপামর মানুষ। তা হলো, শেখ হাসিনার পদত্যাগ। সেই দাবিতেই ৪ তারিখ থেকে সারাদেশে শুরু হয় আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি। একই সাথে আরও কঠোর কারফিউ জারি হয় দেশজুড়ে।

এদিন সকাল থেকে ছাত্র-জনতার প্রতিরোধে রীতিমতো রণক্ষেত্র রাজধানীর যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকা। ছাত্রলীগ-যুবলীগ আর পুলিশের সশস্ত্র হামলা খালি হাতেই মোকাবিলা করতে থাকে কয়েকশ’ মানুষ। রামপুরায় নামেন ইস্ট ওয়েস্ট, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিসহ আশপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক আর সাধারণ মানুষ। তাদের ওপরই বৃষ্টির মতো নামতে থাকে গুলি।

উত্তরা, বাড্ডা, প্রগতি সরণিতেও একই চিত্র। কারওয়ান বাজার, সায়েন্স ল্যাব, শাহবাগ, বাংলামোটর আর ধানমন্ডি তখন যেন যুদ্ধক্ষেত্র।

এ সময় ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা বিচ্ছিন্নভাবে ভাঙচুর চালান বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায়, বিএসএমএমইউ কম্পাউন্ডের ভেতরেও করা হয় অগ্নিসংযোগ। নিম্ন আদালতের মূল গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেও ক্ষোভ ঝাড়তে থাকেন আন্দোলনকারীরা।

হাসপাতালগুলোতেও তখন বইছে রক্তের স্রোত। এত এত গুলিবিদ্ধদের চিকিৎসা দিতে চিকিৎসক-নার্সদের তখন নাভিশ্বাস অবস্থা। এক ঢাকা মেডিকেলেই কয়েতঘণ্টার মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে ভর্তি হন ৬৭ জন। আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় আড়াইশো’ মানুষ। এরমধ্যে জরুরি বিভাগেই ৭ জনের মৃত্যু হয়।

এদিকে মিরপুরে তখন দেখা যায় এক অভূতপূর্ব চিত্র। সরকার সমর্থিত বাহিনীর বিপরীতে আন্দোলনকারীদের পক্ষেই ঢাল হয়ে দাঁড়ান একদল সেনাসদস্য। এসময় পুলিশ-ছাত্রলীগের দিকে সেনাসদস্যরা ফাঁকা গুলি ছুড়লে; ভিন্ন হিসেব-নিকেশের গন্ধ পায় সাধারণ মানুষ।

রক্তের দাম মেটাতে সারাদেশেই তখন শক্ত প্রতিরোধ ছাত্র-জনতার। চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, দিনাজপুর ঝিনাইদহসহ গোটা দেশ রীতিমতো যুদ্ধক্ষেত্র।

তখন ক্ষমতা টেকানোর শেষ চেষ্টায় তৎকালীন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, আর সশস্ত্র বাহিনী প্রধানদের সাথে বৈঠকে বসেন শেখ হাসিনা। সেই বৈঠকেই আন্দোলনে গুলি চালাতে সেনাবাহিনীর ওপর চাপ দেন তিনি।

এই যখন পরিস্থিতি, তখন ‘ডু অর ডাই’ সিদ্ধান্ত আসে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে। ঘোষণা, ৬ তারিখ নয়, ‘মার্চ টু ঢাকা’ হবে ৫ আগস্ট। সমন্বয়করা জানালেন, মার্চ টু ঢাকা একদিন এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত ছিল, মূলত একটা ফাঁদ।

‘মার্চ টু ঢাকা’ ঘোষণার পরই টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। তখন বড় কিছু একটার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দফায় টানা দেড় দশকের মসনদ ত্যাগের আগাম বার্তা পাচ্ছিলেন শেখ হাসিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *