আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীন তাদের চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের বিরতির মেয়াদ আরও ৯০ দিনের জন্য বাড়িয়েছে। এতে একে অপরের পণ্যের ওপর তিন অঙ্কের উচ্চ শুল্ক কার্যকর হওয়ার সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত থাকছে, যা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সোমবার (১১ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে জানান, তিনি একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যার মাধ্যমে চীনের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ আগামী ১০ নভেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিট (ইস্টার্ন স্ট্যান্ডার্ড টাইম) পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। এই সময়ের মধ্যে শুল্ক বিরতির বিদ্যমান শর্তগুলো অপরিবর্তিত থাকবে।
এর কয়েক ঘণ্টা পর, মঙ্গলবার ভোরে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও জানায়, তারা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক একই সময় পর্যন্ত স্থগিত রাখবে। পাশাপাশি, এপ্রিলে মার্কিন কিছু প্রতিষ্ঠানকে যে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বিধিনিষেধের আওতায় আনা হয়েছিল, সেটিও ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। চীন বলেছে, এই সিদ্ধান্ত ৫ জুন দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের টেলিফোন আলাপের সময় হওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্যেরই ধারাবাহিকতা, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে সহায়ক হবে।
এর ফলে চীনা পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১৪৫ শতাংশ এবং মার্কিন পণ্যে চীনের ১২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার সিদ্ধান্ত পিছিয়ে গেল। আপাতত চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত পণ্যে ৩০ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে রপ্তানিকৃত পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকবে।
এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েন্ডি কাটলার বিবিসিকে বলেন, “এটি ইতিবাচক খবর। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দুই দেশই উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে তারা এ বছরের শরৎকালে শি জিনপিং ও ট্রাম্পের বৈঠকের ভিত্তি গড়ে তুলতে চাইছে।”
ট্রাম্প সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “দেখা যাক কী হয়।” তিনি দাবি করেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো এবং তারা একটি বাণিজ্য চুক্তির খুব কাছাকাছি রয়েছেন। ট্রাম্প গত সপ্তাহে সিএনবিসিকে জানিয়েছিলেন, চুক্তি হলে বছরের শেষের আগেই শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করবেন তিনি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতাদের জন্য স্বস্তির খবর, কারণ বছরের শেষের বড়দিন ও ছুটির মৌসুমকে সামনে রেখে কম শুল্কে পণ্য আমদানির সুযোগ তৈরি হলো। এতে ইলেকট্রনিকস, পোশাক ও খেলনাসহ মৌসুমি পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে এবং শরৎকালের আমদানি ধারা বজায় থাকবে।
উল্লেখ্য, গত মে মাসে জেনেভায় আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র ও চীন প্রথমবারের মতো ৯০ দিনের জন্য শুল্কযুদ্ধে বিরতির ঘোষণা দেয়। এরপর জুলাইয়ের শেষ দিকে স্টকহোমে আলোচনার মাধ্যমে বিরতি বাড়ানোর সুপারিশ আসে, যা এবার কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হলো।