বাড়ছে বৃষ্টি, পাহাড়ে বাড়ছে আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিনিধি: ভারি বর্ষণে পাহাড় ধসে প্রাণহানির শঙ্কা। এর মধ্যেই দিন কাটছে রাঙামাটির বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের কোল ঘেঁষে গড়ে তোলা বসতির বাসিন্দাদের। তাদের কাছে বর্ষা যেন এক আতঙ্কের নাম! মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণেই ২০১৭ সালে ১৩ জুনের মতো ভয়াবহ পাহাড় ধসের শঙ্কা জাগে তাদের মনে।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে শুধু মাত্র রাঙামাটি শহরে রয়েছে ৩১টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান, যেখানে বসবাস করে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহরের শিমুলতলি, রুপনগর, যুব উন্নয়ন এলাকা ও সনাতন পাড়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস বেড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের। কেউ জায়গা কিনে, কেউবা দখল করে গড়ে তুলেছে বসতি। প্রশাসনের শত প্রচেষ্টার পরও বন্ধ হয়নি ঝুঁকিপূর্ণ বসতি স্থাপন। বরং দিন দিন বেড়ে চলেছে বসতি। অবশ্য এর সঙ্গে বাড়ছে নাগরিক সুবিধাও। বছর সাতেক আগেও যেখানে চলাচলের জন্য রাস্তা পর্যন্ত ছিল না, সেখানে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। ১৫ ফুট চওড়া সড়ক হয়েছে; বাড়ছে বসতি।
 
শিমুলতলি সমাজ প্রধান আবু জাফর মিঠু বলেন, 
                                                                            ‘আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে এখানে এক টুকরো জমি কিনে বসতি গড়েছি। এ জায়গা ছেড়ে আমরা কোথায় যাবো!’
তিনি বলেন, ‘জানি এটা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা; কিন্তু আমাদের কোনো উপায় নেই। বাধ্য হয় এখানে থাকি। সরকার যদি আমাদের অন্য কোথাও পুনর্বাসন করে, তাহলে সেখানে যেতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’
 
একই এলাকার সমাজ প্রধান জসিম উদ্দিন বলেন, ‘২০১৭ সালের ভয়াবহ ঘটনার পর থেকে আমরা নিজেরাই সচেতন হয়েছি। বৃষ্টি বাড়লেই আমরা সরকার নির্ধারিত আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাই। নিজেরাই সবাইকে সচেতন করি। আশা করি, ভারি বর্ষণে পাহাড় ধসে পড়লেও জানমালের তেমন ক্ষতি হবে না।’
 
তবে রুপনগরের রাহেলা বেগম পাহাড় ধসের ভয়ের মধ্যেও বাড়ি ছাড়তে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘মরলে মরবো, আপনাদের কোনো সমস্যা আছে? একটু বৃষ্টি হলেই প্রশাসনের লোক এসে আমাদের বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলে। আমরা কোথাও যাবো না, দরকার হলে এখানেই মরবো।’
 
সুসাশনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সাধারণ সম্পাদক এম জিসান বখতিয়ার বলেন, 
                                                                                                                                             ‘২০১৭ সালের ভায়াবহ পাহাড় ধসের পর একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটি পাহাড় ধসের কারণ হিসেবে পাহাড়ের ঢালে বসতি স্থাপন, পাহাড় কাটাসহ বেশ কিছু বিষয়কে দায়ী করে। ওই কমিটি বেশকিছু সুপারিশও করেছিল। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসতি স্থাপন বন্ধ, বসবাসকারীদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়াসহ বেশকিছু সুপারিশ ছিল। 

‘কিন্তু দীর্ঘ সাত বছরেও তার কোনো বাস্তবায়ন আমরা দেখিনি। বরং ওই সব এলাকায় বসতি বেড়েছে বহুগুণ। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ থাকবে নিরাপত্তার পাশাপাশি সুপারিশমালা দ্রুত বাস্তবায়ন করুন। তা নাহলে অতীতের চেয়ে আরও ভায়াবহ দিন অপেক্ষা করছে।’
 
পাহাড় ধসের আতঙ্কের মধ্যেও সাধারণ মানুষ বাড়ি ছাড়তে রাজি হন না। এতে হতাহতের একটা শঙ্কা থেকে যায় বলে জানিয়েছেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
 
তিনি বলেন, 
                    ‘আমরা বর্ষার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বিবেচনায় ২১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছি। ভারি বর্ষণ শুরু হলে তাদের সেখানে সরিয়ে নেয়া হবে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকাকালে খাবারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হবে। সে প্রস্তুতিও নেয়া আছে। তবে সাধারণ মানুষ বাসা ছেড়ে আসতে চায় না। এবার এমনটা হলে আমরা বল প্রয়োগ করবো।’ 

সমস্যার স্থায়ী সমাধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি চলমান আছে। কাজটি অনেক বিশাল, সবার সমন্বয়ে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।  তাই একটু সময় লাগছে।
 
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে ১৩ জুন  ভয়াবহ পাহাড় ধসে রাঙামাটিতে ১২০ নিহত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *