জনবান্ধব বাজেট করা হচ্ছে: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি :  বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেই আগামী অর্থবছরে রেকর্ড ৭ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার সম্ভাব্য বাজেট পেশ করতে যাচ্ছে সরকার, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৮৬ হাজার কোটি টাকা বেশি। বাড়ানো হবে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও।

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় বাজেট বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যেন চাপ না বাড়ে। আর অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির গতি ঠিক রেখে মূল্যস্ফীতির ধাক্কা সামাল দেয়া কঠিন হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। সব দিক বিবেচনায় রেখে জনবান্ধব বাজেট করা হচ্ছে বলে জানান পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।  আসছে বাজেট নিয়ে সময় সংবাদের বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

 করোনার ধাক্কা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা। আঁচ থেকে বাদ পড়েনি বাংলাদেশও। ডলার সংকট, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, জ্বালানির দাম ধাপে ধাপে বাড়ার চাপ গিয়ে পড়ে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে বাজারে। মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ে চিন্তার ভাঁজ কপালে। এমন বাস্তবতায় আসছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট। অর্থনীতির রথে গতি কমাতে চায় না সরকার। তাই তো বাড়বে বাজেটের আকার।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম সম্প্রতি সময় সংবাদকে বলেন, উৎপাদন ব্যবস্থাকে অক্ষুণ্ণ রাখা, যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অক্ষুণ্ণ রাখা, জ্ঞানভিত্তিক সমাজের জন্য শিক্ষাকে ব্যবস্থাকে উন্নত করা এ ধরনের প্রকল্পগুলোকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যতোটা সম্ভব আসলে ঘাটতিটা কমিয়ে রাখতে হচ্ছে মূল্যস্ফীতির কারণে। সব দিক বিবেচনায় রেখে জনবান্ধব বাজেট করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। 
 
৭ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার সম্ভাব্য বাজেটে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য ধরা হতে পারে ৭ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। ২ লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেটে খরচ হবে ৩৬ শতাংশ। ভর্তুকি ও প্রণোদনায় ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা ধরা হতে পারে। সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়িয়ে খরচ করা হবে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। বড় অঙ্কের বাজেট বাস্তবায়নে চাপ থাকবে রাজস্ব আদায়ে। ৫ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাজস্ব বোর্ডকে আয় করতে হবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। তারপরও ঘাটতি থাকবে ৫ দশমিক ২ শতাংশের মতো। ঘাটতি মেটাতে ব্যংক থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য হতে পারে ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা।
 
এ বাজেট নিয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, বেশিসংখ্যক জনসংখ্যাকে করের আওতায় আনা গেলে গুটি কয়েক মানুষের ওপর অতিরিক্ত চাপ কমবে।
 
বিজিএমইএয়ের পরিচালক খসরু চৌধুরী সময় সংবাদকে বলেন, বিজনেস কোর্ডের জন্য আমাদের মাল ছাড়াতে কষ্ট হয়। ওয়ান পারসেন্ট সোর্সিং ট্যাক্স ছিল, সেখান থেকে পয়েন্ট ফাইভ জিরো করা, করপোরেট ট্যাক্স আছে সেটাকে একটা ধাপের নিয়ে আসা। 
  
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসিচব ইমরান হাসান বলেন, যারা কর দিচ্ছেন তাদের চাপে রাখবেন, আবার তাদের ওপর কর আদায় বাড়ানো হবে এটা কোনোভাবেই সফলতা বয়ে আনবে না। যারা ব্যবসা করছেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।    
 
বাজেটেরে আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে খাতভিত্তিক বরাদ্দও। অর্থনীতিবিদরা পরামর্শ দিয়েছেন সাধারণ মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির কমানোর চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষায় বেশি গুরুত্ব দিতে।
 
অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকট এটাকে অ্যাডরেস করার জন্য বাজেটে যে সামষ্টিক কাঠামোটা আছে সেটার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতে হবে।  
 
আগামী ১ জুন নতুন অর্থবছরের জন্য সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী। এরপর প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা করে ৩০ জুন চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *