আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অনাহার ও অপুষ্টিজনিত কারণে আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, এতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১২ জনে, যাদের মধ্যে ৯৮ জন শিশু।
রোববার (১০ আগস্ট) গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে অন্তত ৩৮ জন নিহত ও ৪৯১ জন আহত হয়েছেন। এদিকে খাদ্য সহায়তা নিতে গিয়ে ২১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। যুদ্ধের মধ্যেই ত্রাণ সংগ্রহের পথে এমন হতাহতের ঘটনায় মানবিক সংকট আরও গভীর হচ্ছে।
ইসরায়েলের সাম্প্রতিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়া এবং সেখানে বসবাসরত প্রায় ১০ লাখ বাসিন্দাকে দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব সামনে এসেছে। এই পরিকল্পনায় গাজা যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য পাঁচটি মূলনীতি রয়েছে, যার মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ অন্যতম। নতুন পরিকল্পনা অনুসারে, আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে গাজা সিটির মানুষকে জোরপূর্বক স্থানান্তর করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, সামরিক অভিযান এবং পরিকল্পনা নিয়ে যে সমালোচনা চলছে, তা তাদের সংকল্প দুর্বল করতে পারবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র অপেক্ষাকৃত নরম সুরে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, গাজা দখলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত “প্রায় পুরোপুরি ইসরায়েলের” নিয়ন্ত্রণাধীন।
এদিকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বার বার সতর্ক করে আসছে যে, গাজায় খাদ্য, পানি ও চিকিৎসাসহ মৌলিক চাহিদাগুলো বিপর্যস্ত এবং পরিস্থিতি দ্রুত ‘দুর্ভিক্ষের সবচেয়ে ভয়াবহ পর্যায়ে’ পৌঁছেছে। জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজার অবরুদ্ধ ছিটমহলটিতে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রীর প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে স্থানীয় জনগণের দুর্ভোগ বাড়ছে।
বিশ্ব সংস্থার তথ্যমতে, মে মাসের শেষ থেকে গাজায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) এর ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণ সংগ্রহের সময় অন্তত ১৩৭৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন নিহত হয়েছেন জিএইচএফ’র কেন্দ্রের কাছে, এবং ৫১৪ জন ত্রাণবাহী যানবাহনের পথে। যদিও জিএইচএফ এই পরিসংখ্যান প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইসরায়েলি পক্ষ দাবি করছে, তাদের বাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিকদের উপর গুলি ছোড়ে না এবং ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে হামাস সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে গাজায় স্বাধীন সংবাদ সংগ্রহের সুযোগ না থাকায় এই দাবিগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি।
বর্তমান গাজা যুদ্ধে প্রায় ৬১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক। দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই সংঘর্ষে জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত।