• ঢাকা, বাংলাদেশ

বৈশ্বিক পোশাক ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ সামাল দিতে দেশের কারখানাগুলো হিমশিম খাচ্ছে 

 obak 
21st Apr 2022 3:11 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

নিউজ ডেস্ক:বাংলাদেশে ভিড় করছে বৈশ্বিক পোশাক ক্রেতারা। বর্তমানে তৈরি পোশাকের এতো ক্রয়াদেশ আসছে যে দেশীয় কারখানাগুলো তা কুলিয়ে উঠতে পারছে না। সময়মতো পণ্য রফতানি করতে অনেক পোশাক কারখানা সাব-কন্ট্রাক্টেও কাজ করাচ্ছে। আবার দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি থাকায় অনেক কারখানা দুই শিফটে চলছে। করোনাসহ নানা কারণে এমনিতেই কর্মীর সঙ্কট আছে। তার মধ্যে সক্ষমতার চেয়ে বেশি অর্ডার আসায় করখানাগুলোকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ প্রতিটি কারখানায়ই কমবেশি ১৫-২০ শতাংশ কর্মীর ঘাটতি রয়েছে। এমন অবস্থায় আগামী ৬ মাস দেশীয় কারখানাগুলোর কোন নতুন অর্ডার নেয়ার মতো অবস্থায় নেই। পরিস্থিতি সামাল দিতে কারখানাগুলোতে কর্মীদের ওভারটাইম দিয়ে দিনরাত কাজ করাতে হচ্ছে। জরুরি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কর্মী নিয়োগের চেষ্টা করা হচ্ছে। কর্মীর সঙ্কট মোকাবেলায় অনেক কারখানায় উন্নত যন্ত্রপাতি সংযোজন করে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে সময়মতো পণ্য শিপমেন্ট করা নিয়েও কারখানার মালিকদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। মূলত তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ মিয়ানমারে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভারত ও ভিয়েতনামে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া এবং শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ঘনীভূত হওয়া বিদেশী ক্রেতারা বাংলাদেশমুখী হচ্ছে। তৈরি পোশাক খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নিট হচ্ছে এদেশের রফতানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ৯ মাসে অর্থাৎ জুলাই-মার্চ সময়ে ওই খাত থেকে ১৭ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলারের বিদেশী মুদ্রা এসেছে। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে রফতানি বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর ওভেন পোশাক রফতানি করে গত ৯ মাসে ১৪ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। বাংলাদেশের রফতানিকারকরা একক মাস হিসেবে গত মার্চে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ (৪.৭৬ বিলিয়ন) ডলার বিদেশী মুদ্রা এনেছে। বর্তমান বিনিময় হার (৮৬ টাকা ২০ পয়সা) হিসাবে টাকার অঙ্কে ওই অর্থের পরিমাণ ৪১ হাজার কোটি টাকারও বেশি। অথচ মার্চজুড়েই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব গোটা বিশ্বে পড়েছে। কিন্তু যুদ্ধের দামামায় অন্যান্য সূচকে টান পড়লেও দেশের রফতানি আয় ছিল উর্ধমুখী। শুধু মার্চ মাসেই নয়, গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসেও পোশাক রফতানিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত ছিল।
সূত্র জানায়, আবারো করোনার ধাক্কায় চীনের অনেক জায়গায় এখন লকডাউন চলছে। এমন অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ক্রেতারা ওই দেশে গেলে ১৪ দিনের আইসোলেশনে থাকতে হয়। যে কারণে ক্রেতারা ওই দেশে যেতে পারছে না। অথচ পোশাক রফতানির বৃহৎ দেশ চীন। ফলে চীনের অনেক অর্ডারও বাংলাদেশে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে চীন থেকে ক্রয়াদেশ স্থানান্তর হয়ে বাংলাদেশে আসার গতি বেড়েছে। শুধু চীন নয়, ক্রয়াদেশ সরে আসছে এমন দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়াও। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারাই ক্রয়াদেশ বেশি স্থানান্তর করছে। দেশটির বড় পোশাক ক্রেতাদের মধ্যে আছে ওয়ালমার্ট, ভিএফ (কন্তুর), গ্যাপ, জেসিপেনি, ক্যালভিন ক্লেইন, টমি হিলফিগার। তাদের প্রায় সবাই ক্রয়াদেশ স্থানান্তর করে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে। পাশাপাশি ইউরোপভিত্তিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ওভেন ও নিট পোশাক দুই ক্ষেত্রেই ক্রয়াদেশ স্থানান্তর হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের এক্সটারনাল ইকোনমিক্স শাখা থেকে নিয়মিত প্রকাশ পাওয়া তৈরি পোশাকের প্রান্তিক পর্যালোচনা শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালের জুনে রফতানি বৃদ্ধি পেলেও গতি ছিল মন্থর। সেপ্টেম্বরে ওই গতি বাড়তে শুরু করে। কোভিড মহামারীতেও গত ডিসেম্বরে রফতানি ছিল অনেক বেশি উৎসাহব্যঞ্জক। বৈশ্বিক লকডাউন শিথিল হওয়ার পর ক্রেতারা ক্রমেই ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে স্থানান্তর করছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বড় জায়ান্ট কোম্পানিগুলো তাদের উপস্থিতির বিকেন্দ্রীকরণ করছে। চীন, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় যে ক্রয়াদেশগুলো যেত, সেগুলো এখন পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশে আসছে। ওই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের কারখানাগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ পাচ্ছে। গত জানুয়ারি মাসেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে ৪০ শতাংশের বেশি। ইউরোপের ক্রেতারাও ক্রয়াদেশ সরিয়ে নিচ্ছে, তবে তা বড় আকারে এখনো বাংলাদেশে আসতে শুরু করেনি। স্থানাস্তরের যে গতি তা মে মাস পর্যন্ত গড়াবে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যত নিয়ে বড় ধরনের শঙ্কা রয়েছে বলে উদ্যোক্তারা মনে করছে।
এদিকে এ বিষয়ে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম জানান, বিপুল অর্ডার আসছে। শ্রীলঙ্কা থেকেও অনেক অর্ডার বাংলাদেশে আসছে। দেশের উদ্যোক্তারা অর্ডার নিয়ে কাজ করছে। তবে এখানে সমস্যা হলো ‘এজ অব ডুয়িং বিজনেসে’ দেশীয় উদ্যোক্তারা পিছিয়ে পড়ছে। অনেক অর্ডার থাকার পরও যদি তা টেকসই করা না যায় তা নিজেদের কারণেই হবে। কারণ এদেশে বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ভুগতে হয়। এখন আবার শিল্পকারখানায় গ্যাস রেশনিং করা হচ্ছে। এভাবে হলে অর্ডার সময়মতো কীভাবে শিপমেন্ট হবে? এগুলো সরকারকে ভাবতে হবে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, পোশাক রফতানিতে অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, সেই সঙ্গে শঙ্কাও। ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার থেকে অনেক অর্ডার সরছে, কিন্তু মালিকরা তা গ্রহণ করতে চিন্তিত। কারণ জ্বালানি তেলের পর এবার গ্যাসের দাম বাড়ানো নিয়ে আলোচনা চলছে। যদি দাম বাড়ানো হয়, তবে পোশাক শিল্প ওই ভার বহন করতে পারবে না। উপযুক্ত নীতি-সহায়তা দিতে পারলে পোশাক শিল্প অনেক দূরে যেতে পারবে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া স্থগিত রেখে কাস্টমসের জটিলতাগুলো দূর এবং ম্যান মেইড ফাইবারে ইনসেনটিভ দিলে রফতানি আয় বহুগুণ বাড়ানো সম্ভব।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 

আর্কাইভ

December 2023
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031