• ঢাকা, বাংলাদেশ

বিনা টিকিটের যাত্রীতে প্রতিদিনই বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে রেলওয়ে 

 obak 
19th May 2022 3:20 am  |  অনলাইন সংস্করণ

নিউজ ডেস্ক:বিনা টিকিটের যাত্রীতে প্রতিদিনই বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। লোকাল, মেইল ও আন্তঃনগর ট্রেনের প্রায় অর্ধেক যাত্রীই টিকিট কাটছে না। আর এভাবে বিনা টিকিটে ট্রেন চড়ায় শুধু আন্তঃনগর ১০৫টি ট্রেনেই প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা আয় বঞ্চিত হচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ২৫৫টি মেইল ও লোকাল ট্রেনেও নির্ধারিত আসনের এক-চতুর্থাংশ যাত্রী টিকিট কাটে না। অথচ ওসব ট্রেনের নির্ধারিত আসনের ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি যাত্রী রেলে ভ্রমণ করে। লোকাল, মেইল ও আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট না কাটায় প্রতিদিন রেলকে গড়ে ২ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়। এমন ধারায় গত ২ বছর ধরে রেলের লোকসানের পাল্লা ভারি হয়েছে। আর দুই বছর ধরে আসনবিহীন (স্ট্যান্ডিং টিকিট) টিকিটও বিক্রি হচ্ছে না। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতিদিন সোয়া দুই লাখ যাত্রী বহন করে। সঙ্গে বিনা টিকিটের যাত্রী হিসাব করলে সংখ্যাটি তিনগুণ হবে। তবে ঈদের আগে-পরে প্রতিটি ট্রেনে বিনা টিকিটের যাত্রীর সংখ্যা বেশি হয়। মূলত করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ এবং যাত্রীদের অনুরোধে আসনবিহীন টিকিট বিক্রি বন্ধ থাকায় বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ বেড়েছে। বর্তমানে রেলের টিকিট পরীক্ষকের (টিটিই) সংখ্যা খুবই কম। আন্তঃনগর ট্রেনে মাত্র ২৫ শতাংশ টিটিই কাজ করছে। ১০৫টি ট্রেনের মধ্যে ৪০টিতেও তারা যথাযথভাবে অবস্থান করতে পারছে না। একেকটি ট্রেনে ন্যূনতম ১০ থেকে ১২ জন টিটিই থাকার কথা থাকলেও মাত্র দু’একজন দায়িত্ব পালন করছ।
সূত্র জানায়, রেলে ১ টাকা আয় করতে প্রায় ৬ টাকা খরচ হচ্ছে। আর দেশের রেল স্টেশনগুলো যথাযথভাবে তৈরি করা হয়নি। ফলে কোনো স্টেশনেরই শতভাগ নিরাপত্তা নেই। যে কারণে মানুষ খুব সহজেই স্টেশনে প্রবেশ ও বের হতে পারে এবং খুব সহজেই ট্রেনে উঠতে পারে। দেশের প্রধান দুটি রেলস্টেশন কমলাপুর ও বিমানবন্দর স্টেশন থেকে যে কেউ খুব সহজেই বিনা টিকিটে ট্রেনে উঠতে পারে। বিনা টিকিটে ট্রেন চড়ায় একেকটি অভিযানে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ যাত্রীকে আটক করা হয়। প্রায় ৮০ শতাংশ যাত্রীই উন্মুক্ত স্টেশন দিয়ে অথবা আউটারে নেমে পালিয়ে যায়। গত বছর রেলওয়ে ৫৩টি রেলওয়ে স্টেশন সংস্কারের প্রকল্প নেয়। ইতোমধ্যে ওই প্রকল্পের প্রায় অর্ধেকের বেশি সংস্কার করা হয়েছে। প্রতিটি স্টেশনের সংস্কার কাজ তদারকি করতে মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে ১০টি কমিটি করা হয়েছে। তবে ওসব কমিটির সদস্যরা যথাযথভাবে সংস্কার কাজ তদারকি করতে পারছে না। ফলে বিভিন্ন স্টেশনে নামেমাত্র কাজ হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, রেলে একটি প্রকল্পের সমপরিমাণ অর্থ দিয়ে দেশের সবকটি স্টেশনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। কিন্তু অধিকাংশ উন্নয়ন কাজে রেলওয়ে অপারেশন ও পরিবহণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করা হয়নি। বিষয়টি রেলওয়ে বিভাগ ও মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
সূত্র আরো জানায়, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা না থাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ঠিকমতো পরিচালনা করা যায় না। বিনা টিকিটের যাত্রীসহ স্থানীয় লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযানে প্রায়ই সমস্যার সৃষ্টি হয়। প্রায় ১৫ বছর ধরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো যাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হলে বিনা টিকিটে ভ্রমণ রোধ করা সম্ভব হতো। সাধারণ মানুষের মধ্যেও সচেতনতা সৃষ্টি হতো। স্টেশনগুলোতে প্রতিনিয়ত চেকিং অথবা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলে দ্বিগুণের বেশি টাকা আয় হতো।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চলমান ট্রেনগুলোর সঙ্গে অতিরিক্ত কোচ লাগিয়েও আয় বাড়ানো যেতে পারে। বিনা টিকিটে যাত্রী ভ্রমণ রোধ এবং নির্ধারিত মোট টিকিটের সঙ্গে ২০-২৫ শতাংশ আসনবিহীন টিকিট বিক্রি করা হলে আয় আরো বাড়ত।
অন্যদিকে করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে দুই বছর বন্ধ রাখার পর আবার আন্তঃনগর ট্রেনে আসনের অতিরিক্ত স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে রেলভবনে এক বৈঠকে শোভন শ্রেণির টিকিটের বিপরীতে ২০ শতাংশ আসনবিহীন টিকিট বিক্রি নিয়ে আলোচনা হয়।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার জানান, এখন স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি বন্ধ থাকায় বিনা টিকিটি যাত্রী বাড়ছে। কিছুতেই তা রোধ করা যাচ্ছে না। শিগগিরই স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি শুরু হতে পারে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 

আর্কাইভ

November 2023
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930