• ঢাকা, বাংলাদেশ

বিদ্যুৎ কেনার খরচ যোগাতে চাপে রয়েছে বাংলাদেশ 

 obak 
16th Apr 2023 4:37 am  |  অনলাইন সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদ্যুৎ কেনার খরচ যোগাতে চাপে রয়েছে বাংলাদেশ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) । জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যয় আর বিপুল অংকের ক্যাপাসিটি চার্জে চলতি অর্থবছরের বাজেটের প্রস্তাবিত অর্থ দিয়ে বিদ্যুৎ কেনার খরচ সামলানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিপিডিবির জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট নতুন করে সংশোধন করতে হয়েছে। এছাড়া বিপিডিবির অন্যান্য ব্যয় সংকোচনের মাধ্যমে বাড়তি এ খরচ সমন্বয় করা হবে। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

জানা গেছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ৬০ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা বিদ্যুৎ কেনা বাবদ বিপিডিবিকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মার্চে তা বাড়িয়ে অর্থ বিভাগ ওই বাবদ মোট ৮৪ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ের অনুমোদন দিয়েছে। ফলে বিপিডিবির বিদ্যুৎ কেনায় প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ২৩ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিপিডিবির সব খাতেই খরচ বাড়তে যাচ্ছে। তবে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদক (আইপিপি) ও ছোট আকারের আইপিপি (এসআইপিপি) থেকে বিদ্যুৎ কেনায় সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হচ্ছে। অনুমোদিত বাজেটে আইপিপি ও এসআইপিপি থেকে বিদ্যুৎ কেনায় ২৯ হাজার ৪৩৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৫ কোটি টাকা। ওই হিসাবে ব্যয় বাড়তে যাচ্ছে ১২ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। আইপিপি ও এসআইপিপিগুলো ২০২১-২২ অর্থবছরেও বিপিডিবির বিদ্যুৎ কেনা বাবদ খরচ বৃদ্ধি সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল। বিপিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদন বাবদ ব্যয় ২০২০-২১-এর তুলনায় ২২ হাজার কোটি টাকা বেড়েছিল। বাড়তি ওই ব্যয়ের ৯৬ শতাংশই আইপিপি থেকে বিদ্যুৎ কেনায় খরচ হয়েছিল। অতিরিক্ত দামে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে ইতোমধ্যে বিপিডিবির মোট পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ৬৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি দাঁড়িয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের অনুমোদিত বাজেটে রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনা বাবদ বরাদ্দ ছিল ৪৭৬ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। অর্থাৎ এবার শুধু রেন্টাল থেকে বিদ্যুৎ কেনায় বিপিডিবির ব্যয় বাড়ছে ৩ হাজার ৩২৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা। রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) থেকে বিদ্যুৎ কেনায় বিপিডিবির চলতি অর্থবছরে প্রায় ১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা খরচ বাড়বে। অনুমোদিত বাজেটে ওই বাবদ ১ হাজার ২৬৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে ২ হাজার ৮০৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অনুমোদিত বাজেটে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি বাবদ ১০ হাজার ৮৪১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে তা ১ হাজার ৭১১ কোটি টাকা কমে ৯ হাজার ১৩০ কোটি ৫৯ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। সূত্র আরো জানায়, আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে অনুমোদিত বাজেটে ২ হাজার ৩৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার বিদ্যুৎ কেনার কথা থাকলেও সংশোধিত বাজেটে তা ১১৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৪৬০ কোটি ৯৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (ইজিসিবি) থেকে বিদ্যুৎ কেনায় ১ হাজার ১৮০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে তা প্রায় ৭৫ কোটি টাকা বেড়ে ১ হাজার ২৫৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা হয়েছে। নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (এনডব্লিউপিজিসিএল), বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) ও বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) থেকে বিদ্যুৎ কেনায় বিপিডিবির খরচ বাড়বে ৭ হাজার ৯১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অনুমোদিত বাজেটে ওই বাবদ সংস্থাটির ব্যয় বরাদ্দ ছিল ১৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। সংশোধনের পর বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৩০৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

এনডব্লিউপিজিসিএল ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) যৌথ উদ্যোগে গঠিত কোম্পানি বিসিপিসিএল পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনা করছে। এর বাইরে এনডব্লিউপিজিসিএলের অধীনে ১ হাজার ৭৬৩ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। আর বাগেরহাটের রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনা করছে বিআইএফপিসিএল। এদিকে বিদ্যুৎ কেনায় বিপিডিবির ব্যয় বাড়লেও অনুমোদিত বাজেটের তুলনায় সংশোধিত বাজেটে বিদ্যুৎ কেনার পরিমাণ কমবে। সেক্ষেত্রে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ইজিসিবি, এনডব্লিউপিজিসিএল, বিসিপিসিএল, বিআইএফসিএল এবং আমদানি বাবদ বিদ্যুৎ কেনার পরিমাণ কমবে। পাশাপাশি আইপিপি ও এসআইপিপি, রেন্টাল এবং আরপিসিএলের কাছ থেকে চলতি অর্থবছরে বিপিডিবির বিদ্যুৎ কেনার পরিমাণ বাড়বে। অতিরিক্ত দামে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে বিপিডিবির পুঞ্জীভূত লোকসান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। যদিও সরকার বিদ্যুৎ খাতকে লোকসান থেকে ধীরে ধীরে বের করে আনার পরিকল্পনা নিয়েছে। সেজন্য তিন দফায় বিদ্যুতের ৫ শতাংশ হারে মোট ১৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে। আরো কয়েক দফা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পক্ষ থেকেও বিদ্যুতে ভর্তুকি কমানোর চাপ রয়েছে। অন্যদিকে বিদ্যুৎ কেনা প্রসঙ্গে বিপিডিবির সদস্য (অর্থ) সেখ আকতার হোসেন জানান, জ্বালানি খরচই হচ্ছে বিদ্যুৎ কেনা বাবদ বিপিডিবির ব্যয় বাড়ার অন্যতম কারণ। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি আমদানিতে খরচ বেড়েছে। তাছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণেও বড় অংকের ঘাটতিও তৈরি হয়েছে। বিপিডিবির নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণে বিদেশ থেকে মালামাল কেনায় আগের চেয়ে কয়েক গুণ খরচ বেড়েছে। ওসব কারণেই সংশোধিত বাজেটে খরচ বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিদ্যুতের নীতি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন জানান, সরকারের এখন পরিকল্পনা বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসা। কারণ ভর্তুকি দিলে এ খাতে ধনিক শ্রেণীই লাভবান হয়। ফলে পর্যায়ক্রমে তা থেকে বেরিয়ে এসে সব শ্রেণীর গ্রাহকের বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 

আর্কাইভ

December 2023
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031