নিউজ ডেস্ক:বগি স্বল্পতায় বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ট্রেনগুলো যাত্রীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। ওই পথের ১০টি আন্তঃনগর এবং ৩টি মেইল ট্রেনে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী চলাচল করে। কিন্তু চাহিদা থাকলেও একদিকে যেমন রেলওয়ে নতুন ট্রেন যেমন যুক্ত করতে পারছে না, অন্যদিকে সক্ষমতা থাকলেও চলাচলরত ট্রেনে পর্যাপ্ত বগি (কোচ) সংযোজন করা হচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশ রেলওয়ে বাড়তি আয়ের সুযোগ হারাচ্ছে। পাশাপাশি টিকিট না পেয়ে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক যাত্রীকে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। আবার অনেকে স্ট্যান্ডিং টিকিট নিয়ে দীর্ঘপথ ভ্রমণ করতে বাধ্য হচ্ছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রেলে সার্বিকভাবে কোচের সঙ্কট থাকলেও আন্তঃনগর ট্রেনে কোচ সঙ্কট কিছুটা কম। রেলওয়ের কারখানায় লোকবল সঙ্কটে অনেক সময় চাহিদা অনুযায়ী কোচ মেরামত করে তা ট্রেনে সংযুক্ত করা যায় না। রেলওয়ের পাহাড়তলী কারখানা চাহিদার মাত্র ৪০ শতাংশ লোকবল নিয়ে চলছে। বর্তমানে ঢাকাণ্ডচট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী প্রথম শ্রেণির (‘ক’ শ্রেণি) আন্তঃনগর ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা ও তূর্ণা-নিশিতাসহ গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনগুলো ২২টি বগির র্যাক দিয়ে চলাচল করতে পারে। কিন্তু ওসব ট্রেন ১২ থেকে সর্বোচ্চ ১৬ বগি নিয়ে চলছে। যদিও একটি ট্রেন ১২ থেকে ১৬টি বগি নিয়ে চললে যে খরচ হয়, ২২টি বগি সংযোজনেও একই খরচ। তবে বগি বেশি হলে রেলের আয় বাড়ে।
যাত্রীরাও চাহিদা অনুযায়ী টিকিট পায়। কিন্তু বগি সঙ্কটে তা করা যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, ঢাকাণ্ডচট্টগ্রাম রুটে আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর মধ্যে ১৪ বগির সমন্বয়ে গড়া র্যাকে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, ১৬ কোচ নিয়ে তূর্ণা-নিশিতা, ১৮ কোচ নিয়ে সুবর্ণ এক্সপ্রেস চলাচল করছে। ১২ থেকে ১৪ বগি নিয়ে চলছে মহানগর গোধূলি ও মহানগর এক্সপ্রেস। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও মেইল ট্রেন চট্টলা এক্সপ্রেস, ঢাকা মেইল ও কর্ণফুলী এক্সপ্রেসে পর্যাপ্ত বগি সংযোজন করা যাচ্ছে না। শুধু ঢাকাণ্ডচট্টগ্রাম নয়, চট্টগ্রাম-সিলেট রুটেও মাত্র ১৪ বগি নিয়ে পাহাড়িকা ও উদয়ন এক্সপ্রেস চলাচল করছে। আর চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটে বিজয় এক্সপ্রেসে ১৪টি বগি সংযুক্ত রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রুটে চলাচল করা ট্রেনেও বগি সঙ্কট রয়েছে। সুবর্ণ এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা ও তূর্ণা-নিশিতা এক্সপ্রেসে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬টি অতিরিক্ত কোচের চাহিদা থাকে।
ওই কারণে আন্তঃনগরের ট্রেনগুলোতে নির্ধারিত আসনের বাইরে স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি করা হয়। অথচ ট্রেনগুলোতে পর্যাপ্ত বগি থাকলে ওই সমস্যা হতো না।
সূত্র আরো জানায়, ঢাকাণ্ডচট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলোতে বাড়তি বগির চাহিদা থাকলেও রেলের যান্ত্রিক বিভাগ থেকে তা সরবরাহ করা হচ্ছে না। ফলে ট্রেনগুলো কম বগি নিয়েইচলছে। তবে ঢাকাণ্ডচট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নতুন ট্রেনের পাশাপাশি বিভিন্ন রুটে চলাচলের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ১৫০টি নতুন মিটারগেজ বগি আমদানি করা হচ্ছে। ওসব বগি পাওয়া গেলে সঙ্কট অনেকটাই কেটে যাবে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চেšধুরী জানান, রেলে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হলেও তা তুলে আনার কোনো পরিকল্পনা নেই। ফলে লোকসান গুনছে রেলওয়ে। অথচ রেল কর্তৃপক্ষ চাইলেই ট্রেনে ২২ থেকে ২৪টি পর্যন্ত বগি সংযুক্ত করতে পারে। তাতে রেলে যাত্রী পরিবহন বাড়ার পাশাপাশি আয়ও বাড়বে। কিন্তু সক্ষমতা থাকার পরও সেটা করা হচ্ছে না।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন জানান, আন্তঃনগর প্রথম শ্রেণির ট্রেনগুলোতে সর্বোচ্চ ২২টি কোচ সংযোজন করা যায়। তবে নানা কারণে ঢাকাণ্ডচট্টগ্রামসহ বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনে তা করা যাচ্ছে না। কোন আন্তঃনগর ট্রেন কত কোচ নিয়ে চলাচল করবে সেটা রেলওয়ের টাইম টেবিল বইয়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে। আর তা অনুসরণ করেই ট্রেনগুলোর র্যাক তৈরি করা হয়। তবে অনেক সময় যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হয়।