• ঢাকা, বাংলাদেশ

নারী পাচারকারী চক্র ও এসআই বখতিয়ারে ‘বিষাদময়’ তরুণীর জীবন 

 obak 
04th Aug 2021 2:21 am  |  অনলাইন সংস্করণ

রাজধানীর পল্লবীর কুর্মিটোলা ক্যাম্প শাহপরান বস্তির বাসিন্দা পারুল বেগম। ছেলেমেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে তার সুখের সংসার। হঠাৎ এক কালবৈশাখী ঝড়ে সংসারে নেমে আসে অশান্তি।আর এ অশান্তি পরিবারের বড় মেয়ে খুশিকে ঘিরেই। নারী পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়েন খুশি।

চলতি বছর জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় খুশিকে ভারতে পাচার করে একটি নারী পাচারকারী চক্র।চক্রের সদস্যরা মিরপুর ১১ নম্বর বাউনিয়াবাঁধের বাসিন্দা। মেয়েকে উদ্ধার করতে চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করলেও তা আমলে নেয়নি পুলিশ। বরং মাসের পর মাস থানার বারান্দায় ঘুরতে হয়েছে পারুলকে।

এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী ওই তরুণীর মা পারুল বেগম মঙ্গলবার মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন।

অভিযোগে তিনি বলেন, আমার মেয়ে খুশিকে (১৮) গত ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বাসা থেকে বের করে নিয়ে যায় সোহাগ ওরফে নাগিন সোহাগ ও তার মামা কাল্লু (৪০)। এরা আমাদের পূর্ব পরিচিত ও প্রতিবেশী।ওই দিন রাতেই নাগিন সোহাগ ও তার মামা কাল্লু মিলে আমার মেয়েকে সাতক্ষীরায় বিল্লাল নামের এক নারী পাচারকারীর কাছে নিয়ে যায়। এর একদিন পর দিনের বেলায় মেয়ে আমাকে ফোন দিয়ে জানায় নাগিন সোহাগ, কাল্লু ও সাতক্ষীরার বিল্লাল জোর জবরধস্তি করে তাকে ভারত নিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমি পল্লবী থানায় একটি অভিযোগ জমা দেই।

অভিযোগের তদন্ত দেওয়া হয় পল্লবী থানার এসআই বখতিয়ারকে। আমি আসামিদের নাম বলামাত্রই তিনি আমাকে বলেন, আমি বিষয়টি দেখছি। আপনি বাসায় যান।পরবর্তীতে তাকে আমি অনেকবার ফোন করি।তিনি সহজে আমার ফোন রিসিভ করতেন না। রিসিভ করলেও নানান ব্যস্ততা দেখাতেন।

এ ঘটনার পর মেয়ের সন্ধানে প্রতিদিনই থানায় যেতাম।কোনো কাজ হতো না। পুলিশ খালি ঘুরাত।একপর্যায়ে মেয়ের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি।এর কিছুদিন পর একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে আমার নাম্বারে ফোন আসে। ফোন রিসিভ করতেই আমার মেয়ে খুশি বলছে, আম্মু আমাকে বাঁচাও আমি ভারতে আছি।এরপর উপায় না দেখে কাল্লুর সঙ্গে যোগাযোগ করি।কাল্লু আমাকে সাতক্ষীরা নিয়ে যায়। সেখানে থেকে অবৈধভাবে ভারতে যাই।ভারতের দালালের কাছে আমাকে এক লাখ বিশ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।আমি সেখান থেকে পালিয়ে যাই। মেয়েকে খুঁজতে থাকি।এক ভারতীয় ছেলের মাধ্যমে খুশির সন্ধান পাই।ওই ছেলের নাম মিঠু।সে আমাকে জানায় পাঞ্জিপাড়ার একটি খারাপ এলাকায় খুশিকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনা শোনার পর আমি ওই এলাকার চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে অনেক কান্নাকাটি করি।তিনি সব শুনে খুশিকে উদ্ধার করে দেন।

পরের দিন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষীর হাতে মা-মেয়ে আটক হই।তারা আমাদের করুণ ঘটনা শোনার পর বিজিবির সঙ্গে পতাকা বৈঠক করে এবং তাদের কাছে সোপর্দ করে।সেখান থেকে মহেশখালী থানায় আমাদেরকে পাঠানো হয়। বিজিবি এবং মহেষখালী থানা থেকে পল্লবী থানায় বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। পল্লবী থানায় এসে মামলার ব্যাপারে এসআই বখতিয়ারকে তাগাদা দিলেও তিনি উল্টো আমাদের দোষারোপ করেন। এসআই বখতিয়ার বলেন, আপনাদের অনেক ঝামেলা। এত ঝামেলা শোনার সময় আমার নেই।তিনি (এসআই বখতিয়ার) পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে মামলা নিতে রাজি নন অভিযোগে উল্লেখ করেন পারুল।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 

আর্কাইভ

December 2023
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031