• ঢাকা, বাংলাদেশ

ডলারের অস্বাভাবিক দামে রেমিট্যান্স প্রবাহে হুন্ডি তৎপরতা বাড়ার আশঙ্কা 

 obak 
27th May 2022 3:55 am  |  অনলাইন সংস্করণ

নিউজ ডেস্ক:খোলাবাজারে ডলারের অস্বাভাকি দাম বৃদ্ধিতে রেমিট্যান্স প্রবাহে হুন্ডি তৎপরতার আশঙ্কা বাড়ছে। কারণ ব্যাংকিং চ্যানেল ও খোলাবাজারের মধ্যে ডলারের দামে এখনো ৭ থেকে ১০ টাকার ফারাক। এ অবস্থায় হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠালে প্রবাসীরা বেশি টাকা পাচ্ছে। সেজন্যই প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে থাকা স্বজনদের কাছে টাকা পাঠাতে হুন্ডির দিকেই ঝুঁকছে। এখনো ডলারের ব্যাংক রেট ৮৭ টাকার নিচে। আর সরকারি ঘোষিত ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা যোগ হয়ে প্রতি লাখে প্রবাসীরা অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা বেশি পায়। কিন্তু অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠালে তারা প্রতি লাখে ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা বেশি পাচ্ছে। সেজন্যই প্রবাসীরা অবৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। তাতে সরকার বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অর্থনীতিবিদ এবং ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বৈধ পথে রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধি গত ঈদুল ফিতরের সময়ও ছিল। কিন্তু বর্তমানে খোলাবাজারে ডলারের দাম হঠাৎ করে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় অবৈধ পথে রেমিট্যান্স বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। এমনকি প্রবাসী বাংলাদেশিরা মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা বেড়াতে যাওয়া স্বজনদের কাছেও নগদ ডলার পাঠিয়ে দিচ্ছে। সৌদি আরব, দুবাই, মালয়েশিয়া, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, এমনকি সাইপ্রাস, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপের দেশ ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অবৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে বৈধ পথে বৈদেশিক মুদ্রা আসার পরিমাণ কমে যাবে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কাও বাড়ছে। তখন দেশের বাজারে ডলারের সংঙ্কট আরো তীব্র হতে পারে।
সূত্র জানায়, ডলারের দর ব্যাংকের তুলনায় খোলাবাজারে দ্রুত বেড়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে হুন্ডি ও অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়ার কারণেই ডলারের অবৈধ বাজারে চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি দর আরো বাড়বে এমন আশায় অনেকে ডলার কিনে রাখছে। তাছাড়া অর্থ পাচারের উদ্দেশ্যে আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিংও বেড়েছে। যদিও তখন ডলারের দাম খুব একটা বাড়তি ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের রেট এক লাফে খোলাবাজারে ১০২ টাকায় উঠে যায়। যদিও দু-তিন দিন পরই তা আবার ৯৬ টাকায় নেমে এসেছে। দাম কমিয়ে ডলারের বাজারটাকে স্থিতিশীল করতে না পারলে হুন্ডি ও পাচার উভয়ই আরো বাড়বে। অসৎ ব্যবসায়ীরা ওভার ইনভয়েস করে রপ্তানি বেশি দেখিয়ে ডলারের মূল্য বৃদ্ধির অবৈধ সুবিধা নিতে চাইবে। আবার আন্ডার ইনভয়েস করে পণ্য আমদানির আড়ালে ডলার পাচারও হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। সূত্র আরো জানায়, চলতি অর্থবছর দেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি বেড়েছে। অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসেই ৭ লাখের বেশি লোক কাজের জন্য বিদেশে গেছে। সরকার রেমিট্যান্সের জন্য প্রণোদনা দিচ্ছে। তারপরও আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অর্থ পাঠানো কমে গেছে। অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৭৩১ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ শতাংশ কম। রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার পেছনে বিশেষজ্ঞরা হুন্ডি বেড়ে যাওয়াকে অন্যতম কারণ মনে করছে। প্রণোদনা থাকলেও ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানোর খরচ বিবেচনায় নিলে ব্যাংকের চেয়ে হুন্ডির মাধ্যমে প্রবাসীরা অনেক বেশি দর পাচ্ছে। সেজন্যই বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রক্রিয়া আরো সহজ করাসহ প্রণোদনা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে বিশে¬ষকরা।
সূত্র আরো জানায়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ৪১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। এখন তা আবার ৪৩ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। আর আমদানির চেয়ে রপ্তানি অনেক কম হওয়ায় সরকারের চলতি হিসাবে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। ফলে বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে, যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য মোটেও সুখকর নয়।
এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, খোলাবাজারে ডলারের দাম বাড়ার ফলে ইনফরমাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়াতে উদ্বুদ্ধ হওয়ার একটা আশঙ্কা তো থাকেই। এবার হঠাৎ করে যেহেতু খোলাবাজারে ডলারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে তাই অতি মুনাফার লোভে প্রবাসীদের অনেকেই অবৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী হবেন। তা ঠেকাতে হলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রক্রিয়া আরো সহজ করতে হবে। একই সঙ্গে সম্ভব হলে প্রণোদনার পরিমাণও কিছুটা বাড়িয়ে দিতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেকগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও সম্প্রতি ডলারের দাম অনেকটা বেড়ে গেছে। অবশ্য আমদানি পর্যায়ে কতগুলো সিদ্ধান্ত এবং তদারকি বাড়ানো গেলে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। তে পাচার ও হুন্ডি ঠেকানোর জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 

আর্কাইভ

December 2023
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031