• ঢাকা, বাংলাদেশ

জমি ও চাষির সংখ্যা বৃদ্ধিতে দেশে বিপুল পরিমাণ লবণ উৎপাদন 

 obak 
19th May 2022 3:35 am  |  অনলাইন সংস্করণ

নিউজ ডেস্ক:চাষযোগ্য জমি ও চাষির সংখ্যা বৃদ্ধিতে এবার দেশে বিপুল পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়েছে। চলতি অর্থবছরে দেশে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন লবণ উৎপাদন হয়েছে । যা গত ৬১ বছরের ইতিহাসে রেকর্ড। তবে উৎপাদন রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলেও তা দিয়ে দেশের চাহিদা পূরণ হবে না। কারণ বর্তমানে দেশে লবণের চাহিদা ২৩ লাখ ৩৫ হাজার টন। উৎপাদনের যে হিসাব পাওয়া যাচ্ছে তা ৮ মে পর্যন্ত। মৌসুমের বাকি ১৫ থেকে ২০ দিন যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে আরো ২ লাখ টন লবণ উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে পারে। কিন্তু তাতেও চাহিদার পরিমাণ ছুঁতে পারবে না উৎপাদন। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে ইতিপূর্বে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছিল ১৮ লাখ ২৪ হাজার টন। ওই সময় লবনের চাহিদা ছিল ১৬ লাখ ৫৭ হাজার টন। তারপর নানা কারণে দেশের লবনের উৎপাদন কমতে থাকে। সেজন্য চাষীদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলাসহ জমির পরিমাণ কমে যাওয়াকে কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে লবণের চাহিদা ছিল ১৮ লাখ ৪৯ হাজার টন আর উৎপাদন হয়েছিল ১৫ লাখ ৭০ হাজার টন। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে চাহিদা ছিল ২২ লাখ ৫৬ হাজার টন, কিন্তু চাহিদা পূরণ না হলেও উৎপাদন তার আগের বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়ে ১৬ লাখ ৫১ হাজার টনে দাঁড়ায়।
সূত্র জানায়, দেশে আগের চেয়ে লবণচাষী ও চাষের জমির পরিমাণ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে ৩৭ হাজার ২৩১ জন চাষ লবণ চাষ করেছে। এই সংখ্যা গত অর্থবছরে ছিল ২৭ হাজার ৬৯৭ জন। চাষীর এই সংখ্যা গত ১০ বছরে সর্বোচ্চ। একইসঙ্গে আগের অর্থবছরের চেয়ে এবার জমির পরিমাণ বেড়েছে ৮ হাজার ৬৩৭ একর। এবার দেশের ৬৩ হাজার ২৯১ একর জমিতে লবণ চাষ করা হয়েছে। এর পরিমাণ ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। লবণ উৎপাদন মৌসুম শেষ হতে এখনো ১০ থেকে ২০ দিন বাকি আছে। বিসিকের প্রত্যাশা, অনুকূল আবহাওয়া পেলে এবার উৎপাদন ২০ লাখ টন ছাড়িয়ে যেতে পারে।
সূত্র আরো জানায়, দেশের চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলায় লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। লবণ উৎপাদনের জন্য পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ (পিপিটি) ১৫ এর উপরে থাকতে হয়। ফলে সমুদ্র উপকূলীয় কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া, রামু, মহেশখালী, কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, পেকুয়া, টেকনাফ এবং চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী লবণ উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত। সমুদ্রের পানি এবং সূর্যের তাপকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন করা হয় লবণ। ফলে আবহাওয়া লবণচাষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত থাকে লবণচাষের মৌসুম। এবার এই সময়ের মধ্যে বৃষ্টি কম হয়েছে। আবহাওয়া ছিল লবণ চাষের জন্য উপযুক্ত। ওই কারণে লবণ উৎপাদন বেশি হয়েছে।
এদিকে লবণচাষীরা বলছেন, খুব বেশি না হলেও অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার লবণের দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। মৌসুমে বৃষ্টি বাদল তেমন একটা হয়নি। যা লবণ চাষের জন্য আবহাওয়া ভালোই ছিল। তাই উৎপাদন বেড়েছে। তবে জমির খাজনা, শ্রমিকের মজুরিসহ নানা আনুষাঙ্গিক খরচ মিলিয়ে চাষীর খুব বেশি লাভ থাকে না। তারপরও বলা যায় লবণচাষে সুদিন ফিরছে।
অন্যদিকে বিসিকের তথ্যানুযায়ী চলতি মৌসুমে মাঠ পর্যায়ে ক্রড লবণের বাজার দর মণ প্রতি জুলাইয়ে ছিল ২১৫ টাকা। পর্যায়ক্রমে আগস্টে ২২০ টাকা, সেপ্টেম্বরে ২২৫ টাকা, অক্টোবরে ২৭০ টাকা, নভেম্বরে ২৯৮ টাকা, ডিসেম্বরে ২৯৪ টাকা, জানুয়ারিতে ৩১৫ টাকা এবং ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৩৪৪ টাকা। মার্চে এসে দাম কমে দাঁড়ায় ২৩১ টাকা এবং এপ্রিলে ২৬৪ টাকা। সবশেষ মে মাসে ২৭০ টাকায় মণপ্রতি অপরিশোধিত লবণ বিক্রি হচ্ছে। আর প্রক্রিয়াজাতকরণের পরে কেজিপ্রতি আয়োডিন যুক্ত লবণ খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে ট্র্যাডিশনাল ২০ টাকা, মেকানিক্যাল ২৪ টাকা, ভ্যাকুয়াম ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মূলত উপকূলীয় অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান এবং গুণগত মানসম্পন্ন লবণ উৎপাদনের মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে ১৯৬০ সালে দেশে লবণ উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করে তৎকালীন ইপসিক, যা বর্তমানে বিসিক। মাত্র ৬ হাজার একর জমিতে শুরু হওয়া লবণ চাষ এখন ৬৩ হাজার একর ছাড়িয়েছে। বিশেষ করে ২০০০ সালের পর থেকে দেশে বেড়েছে লবণ উৎপাদন। সেসময় থেকে লবণের মান উন্নয়ন এবং লবণ চাষ বৃদ্ধির লক্ষে সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে প্লাস্টিক পদ্ধতিতে লবণ চাষে উৎসাহ দেয়া হয়। ফলে কম সময়ে ভালো মানের অধিক লবণ উৎপাদনের পথ সুগম হয়। তাতে চাষিরা আগ্রহী হয়ে ওঠে।
এ প্রসঙ্গে লবণখাত সংশ্লিষ্টদের মতে, লবণচাষ মূলত আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। এ শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হলে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বাড়াতে হবে চাষ যোগ্য জমির পরিমাণ। চাষীদেরও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে। আর তাহলেই দেশের চাহিদা অনুযায়ী লবণ উৎপাদন করা যাবে। উৎপাদন বাড়লে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানিও করা সম্ভব হবে। সেইসঙ্গে আমদানি নির্ভরতাও কমানো যাবে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 

আর্কাইভ

December 2023
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031