আবহাওয়া ডেস্ক:সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, জেটিতে এখন জাহাজ আছে পাঁচটি। এ ছাড়া বহির্নোঙরে ৬০টির মধ্যে ২৯টিতে পণ্য খালাস চলছিল। আপাতত পণ্য খালাস বন্ধ রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে পতেঙ্গার ১৫ নম্বর ঘাট এলাকায় অবস্থানরহ সব লাইটার জাহাজকে সদরঘাট ও শাহ আমানত সেতু এলাকায় অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে রূপ নিয়েছে রোববার রাতেই। সোমবার (২৪ অক্টোবর) তা প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। পূর্ব-মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্যবঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।
এটি রোববার দিনগত মধ্যরাতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) ভোরে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক নম্বর-৭) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর এ তথ্য জানিয়েছে।
এরই মধ্যে গভীর নিম্নচাপটি আরও শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাংয়ে’ পরিণত হয়েছে। সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৪ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেতের অর্থ হলো, বন্দর ঘূর্ণিঝড় কবলিত।
বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১ থেকে ৬১ কিলোমিটার, তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়ার মতো তেমন বিপজ্জনক সময় এখনও আসেনি।
বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুদ্ধ রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবশ্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জল্লোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।
ঘূর্ণিঝড়টি মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, সোমবার ভোর ৫টা থেকে ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে পূর্ব/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
তিনি আরও জানান, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এখন বৃষ্টির পরিমাণ কম থাকলেও ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকবে। অর্থাৎ আজ থেকে সারাদেশেই ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির আশঙ্কা বাড়ছে। বিশেষ করে উপকূল অঞ্চলে বৃষ্টির তীব্রতা বেশি থাকবে।
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, এটি ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোচ্ছে। মঙ্গলবার বাংলাদেশের তিনকোণা দ্বীপ (খুলনা) ও সন্দ্বীপের (চট্টগ্রাম) মধ্য দিয়ে এটি স্থলভাগে উঠতে পারে। স্থলভাগে আঘাত করার সময় বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির নাম ‘সিত্রাং’, থাইল্যান্ডের দেয়া। তবে শব্দটি শ্রীলঙ্কাভিত্তিক। এর অর্থ ‘পাতা’ বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) অধীন জাতিসংঘের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের ১৩ দেশের (বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, সৌদি আরব ও ইয়েমেন) আবহাওয়াবিদদের সংস্থা এস্কেপ ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়ে থাকে।ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ক্ষতি এড়াতে এরই মধ্যে সারা দেশে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি ও বহির্নোঙরে অবস্থানরত জাহাজগুলোকে গভীর সাগরে চলে যাওয়ার নিদেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বহির্নোঙরে পণ্য খালাস বন্ধ রাখা হয়েছে।