• ঢাকা, বাংলাদেশ

অযৌক্তিক আদায় কেজিতে ৫ টাকা 

 obak 
04th Aug 2021 1:01 am  |  অনলাইন সংস্করণ

একজন শ্রমিক বর্তমান বাজার থেকে এক কেজি মোটা চাল কিনছেন ৫০ টাকায়। সরকারি হিসাবে একই চাল কৃষকের উৎপাদন খরচ ৩৯ টাকা। ওই দিন খুচরা বাজারে ১১ টাকা প্রতি কেজিতে বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে।

কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর হিসাবে ভোক্তা পর্যায়ে মোটা চালের কেজি ৪৫ টাকার বেশি হবে না। সরকারের নজরদারির অভাবে প্রতি কেজিতে পাঁচ টাকা অযৌক্তিক বাড়িয়ে ফায়দা লটুছে একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা।

জানাতে চাইলে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, চালের কেজিপ্রতি উৎপাদন খরচ ৩৯ টাকা হলে ভোক্তা পর্যায়ে এর মূল্য ৪৫ থেকে ৪৬ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়।

আর এর ভিত্তি ধরে আমদানি করা চালের কেজি ৪৩-৪৪ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, সে ব্যবস্থাই নিতে হবে সরকারকে।

এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। পাশাপাশি মিলাররা ভোক্তাদের জিম্মি করতে পারবে না। এটি হচ্ছে সরকারের নজরদারির অভাবে। এদিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে।

বাজারে মোটা চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে সরকারের মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ মূল্যস্ফীতির ৬০ শতাংশ নির্ধারণ হয় চালের মূল্যের ওপর ভিত্তি করে।

এরই মধ্যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মূল্যস্ফীতির যে সর্বশেষ হিসাব বের হয়েছে, সেখানে দেখা গেছে জুনে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এর আগের মাস অর্থাৎ মে মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ধারণা করা হচ্ছে জুলাইয়ের মূল্যস্ফীতির হার আরও বাড়বে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ছে নিম্নআয়ের মানুষগুলো।

উল্লিখিত উৎপাদন ব্যয় ও বাজারমূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মোটা চালের কেজিতে পাঁচ টাকা অযৌক্তিক বাড়ানোর কারণে বোরো মৌসুমের ফলন থেকে সিন্ডিকেটের পকেটে ১০ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ঢুকবে।

২০২০-২১ অর্থবছরে বোরো মৌসুমের চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই কোটি পাঁচ লাখ মেট্রিক টন অথবা দুুই হাজার ৫০ কোটি কেজি। কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা অযৌক্তিক মুনাফা ধরে এই মোটা অঙ্কের টাকা ভোক্তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

বর্তমান খুচরা বাজারে বোরো মৌসুমের মোটা চাল ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। মাঝারি চাল ৬০ টাকা। প্রকৃতপক্ষে কৃষক পর্যায়ে এই চাল উৎপাদনে কত খরচ হয়েছে সেটি নিরূপণ করেছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।

সেখানে দেখানো হয়, এক একর জমিতে কৃষকের বীজ খরচ হয়েছে ৮০০ টাকা, সার বাবদ পাঁচ হাজার ৬৮৫ টাকা, মাড়াই ব্যবস্থাপনায় ৭০০ টাকা, রোপা ব্যবস্থাপনায় ৫০০ টাকা, আগাছা নিড়ানিতে ৭০০ টাকা। এ ছাড়া কৃষকের পারিবারিক শ্রম (২২ জন, দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা হারে) ১১ হাজার টাকা, ভাড়া ৫২ জন শ্রমিক মজুরি ২৬ হাজার টাকা, জমি কর্ষণে পাওয়ার টিলার ব্যয় সাড়ে চার হাজার টাকা, পানি ব্যবস্থাপনায় আট হাজার টাকা ও মাড়াই খরচ হয় তিন হাজার টাকা।

পাশাপাশি এক একর জমি তৈরি করতে কৃষকের চলতি মূলধন লেগেছে ৪৯ হাজার ৮৮৫ টাকা, এই মূলধনের সুদ ৭৪৮ টাকা ও জমির ভাড়া বা লিজে ব্যয় আট হাজার টাকা। সব খরচ মিলে এক একর জমিতে কৃষকের ধান উৎপাদনে ব্যয় হয় ৬৯ হাজার ৬৩৩ টাকা।

প্রতি একর জমিতে কৃষক ধান পেয়েছেন ২৫শ কেজি এবং খড় বিক্রি বাবদ আয় চার হাজার ৬০০ টাকা। খড়ের টাকা বাদ দিয়ে প্রতি কেজিতে কৃষকের ধান উৎপাদনে ব্যয় হয় ২৭ টাকা এবং ধান থেকে এক কেজি চাল উৎপাদনে ব্যয় দাঁড়ায় ৩৯ টাকা। কাওরান বাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতা সিদ্দিকুর রহমান যুগান্তরকে জানান, পাইকারি হিসাবে কেজি ৪৫ টাকা থেকে ৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা চালের দাম বেশি। তাই বিক্রি করা হচ্ছে না।

সরকারি হিসাবে যে চালের উৎপাদন মূল্য ৩৯ টাকা সেটি পাইকারি বাজারে আসতে বেড়ে যাচ্ছে ছয় থেকে সাত টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে বাড়ছে আরও পাঁচ টাকা।

কিন্তু পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়লেও কৃষক লাভবান হচ্ছেন না। বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হয় কুড়িগ্রাম সদরের বেলগাছা ইউনিয়নের পশ্চিম কল্যাণ গ্রামের নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, খুচরা বাজারে চালের মূল্য বাড়লে কৃষকের কোনো লাভ হয় না। এ বছর তিন একর জমিতে বোরো ফসল উৎপাদন করেছেন। প্রতি একরে ৬০ থেকে ৭০ মণ ধান পেয়েছেন এই কৃষক। তিনি প্রতিমণ ধান (মোটা চালের) বাজারে ৯৮০ টাকায় বিক্রি করেছেন। তার মতে, যে দামে ধান বিক্রি করা হয়েছে সে হিসাবে খুচরা বাজারে অনেক বেশি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে চাল। যা আরও কম হওয়া দরকার ছিল।

চালের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসাবে সরকারের নজরদারির অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে প্রশাসনের পুরো নজর এখন স্বাস্থ্য খাতে। টিকা সংগ্রহ, টিকা দেওয়া, লকডাউন, অর্থনীতি চাঙ্গা করাসহ নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নে পুরোপুরি নজর সেখানে রয়েছে। এই সুযোগ নিয়ে অসাধু চক্র চালের বাজার অস্থির করে তুলেছে। করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতে সাধারণ মানুষের আয় কমছে। অনেকে ব্যয় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। এমন সময় চালের মূল্যবৃদ্ধি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন ভোক্তারা।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আর্কাইভ

September 2023
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930